সারা দেশের খেলার মাঠ সংরক্ষণ করুন

সারা দেশের খেলার মাঠ সংরক্ষণ করুন

আমাদের অনেক কিছু প্রয়োজন। কারণ ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার’ হলে চলবে না। সর্দারের জন্য ষড়ঞ্জাম না থাকলে সে কিছুই করতে পারবে না। তাই প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন। আর আমাদের মৌলিক অধিকারের কথা যদি বলি তাহলে সবার আগে প্রয়োজন অন্ন। কারণ পেটে খাবার না থাকলে কোন উন্নয়নই আর উন্নয়ন হিসেবে চোখে পড়বে না। ক্ষুধা এমনই এক বাস্তব ও কঠিন সত্য। নুন্যতম চাহিদা মেটাতে না পারলে সুকান্তের সেই কালজয়ী কবিতার মতো হয়ে যাবে, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। পেটে ক্ষুধা থাকলে পূর্ণ চাঁদকে দেখলেও মনে হবে খাবার রুটির মতো। এরপর বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। মানুষের জীবন ধারণের জন্য এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকারগুলোর পর্যায়ক্রমিক বিন্যাস দেখলেই বোঝা যায় কোনটি আমাদের আগে প্রয়োজন। সেই হিসেবে আগে ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে। তারপর লজ্জা নিবরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দুটি অধিকার নিশ্চিত হওয়ার পরই প্রয়াজন হবে বাসস্থান অর্থাৎ থাকার ব্যবস্থা। তারপর শিক্ষা ও চিকিৎসা।

আমাদের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারলেই এরপর আসবে বিকাশ, সুরক্ষা, বিনোদনসহ নানামুখি প্রয়োজন। মানুষ হিসেবে মৌলিক অধিকার পাওয়ার পরও আলোকিত ও বিকশিত মানুষ প্রয়োজন হবে। তারপর হচ্ছে এই মানব সমাজের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। মানুষ হিসেবে যদি বেড় ওঠার সুযোগই সৃষ্টি করা না যায় তাহলে কার সুরক্ষা কে নেবে। তাই বলতেই হয় আগামীর সম্ভাবনা গড়ে তুলতে হলে শিশুদের মনোবিকাশ, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করা বিশেষ করে খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার দিকে নজর দিতেই হবে। সেজন্য প্রয়োজন শিশুদের জন্য খেলার মাঠ।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে সারা দেশে যতোগুলো খেলার মাঠ ছিল বর্তমানে সেটা কেবল ইতিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। এমনকি দেশ  স্বাধীন হওয়ার পরও খেলার মাঠগুলো ছিল উন্মুক্ত ও অবারিত। আমাদের শিশুরা সেখানে খেলতে খেলতে বড় হয়েছে। আজকের এই সময় এসে কিছু ক্লাব ভিত্তিক খেলার মাঠ চোখে পড়বে। সেখানে সব শ্রেণির শিশুরা খেলাধূরা করার সুযোগ পায় না কিংবা সুযোগ নেই। তাদের খেলাধুলার জন্য পাড়ার খেলামাঠই ছিল মূল ভরোসা। বর্তমান সময়ে খেলার মাঠগুলো কেবল সংকুচিতই হয়নি দখল, দুষণ এবং উন্নয়নের নামে মাঠগুলোর অস্তিত্ব চরম হুমকীর মুখে পড়েছে। যার ফলে আমাদের শিশুরা এখন আর মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা কেবল মুঠোফোন এবং বদ্ধ ঘরে থেকে থেকে গিনিপিগ হয়ে বেড়ে উঠছে। যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এখান থেকে বের হতে হলে সারা দেশের খেলার মাঠগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। কোনভাবেই উন্নয়নের দোহাই দিয়ে খেলার মাঠ বন্ধ করা যাবে না। 

ঢাকার তেঁতুল তলার মাঠ রক্ষায় আন্দোলন করতে গিয়ে মা ও কিশোর সন্তানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরে সার্বিকভাবে আন্দোল দানা বাঁধলে বাধ্য হয়েই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অবহিত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় তেঁতুল তলার খেলার মাঠ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না পেলে ওই মাঠ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত আন্দোলন কোন পর্যায় যেত তা বলা কঠিন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণেই রক্ষা পেয়েছে তেতুঁল তলার মাঠ। একটি খেলার মাঠ রক্ষায় কেন প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিতে হবে। আগেই তো বিষয়টি সমাধান করা যেত। কিন্তু হয়নি। তাই আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেবল তেতুঁল তলার খেলার মাঠ নয়, সারা দেশের খেলার মাঠ রক্ষায় আপনি উদ্যোগ নিন।

আমরা জানি সারা দেশে এরকম অসংখ্য খেলার মাঠ বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থার নামে ও বেনামে রয়েছে। যেগুলো রক্ষায় যেন কঠিন নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলে আমাগীতে আর কোন সংস্থা খেলার মাঠ দখল কিংবা কিনে নেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে দখল ও ধবংস করতে পারবে না। প্রয়োজনে আইন করে খেলার মাঠ সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।