ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে চাপা দেওয়া কভার্ডভ্যানের চালক মো. জলিল মিয়াকে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রোববার দুপুর দুইটার দিকে শুনানী শেষে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শামীম আহম্মেদ আসামী জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া চালক জলিল মিয়া (৫০) টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর পৌরসভার পুস্তকমারি এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিন সিকদারের ছেলে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার এসআই আব্দুল মালেক একই আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত তখন রিমান্ড আবেদনটি গ্রহণ করে আসামীর উপস্থিতিতে গতকাল রোববার (২২ জুলাই) শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার অফিসার (জিআরও বন্দর থানা) এসআই মিলি খানম জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মালেক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। শুনানী শেষে আদালত চালক জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্ণকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া। কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন।
এ সময় চালক জলিল মিয়া কাভার্ডভ্যানটি না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল মিয়াসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগেই সোমবার রাতে বন্দর থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে চাপা দেয়ার ঘটনায় আটক কাভার্ডভ্যানচালক মো. জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দর থানায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় বন্দর থানার এসআই আব্দুস সবুরকে। একদিনের মাথায় তাকে পরিবর্তন করে এসআই আব্দুল মালেককে তদস্তভার দেয়া হয়।
নিহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নে। তার বাবা ইউনুস সরদার সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।