সিটি মেয়রের মহানুভবতার ফায়দা লুটছে অটো রিক্সা শ্রমিক নেতারা

সিটি মেয়রের মহানুভবতার ফায়দা লুটছে অটো রিক্সা শ্রমিক নেতারা
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর আদেশের ফায়দা লুটছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা শ্রমিক নেতারা। মেয়রের মহানুভবতার সুজগ নিয়ে নগরীকে লুটে পুটে খাচ্ছে। বৈধ্য অটো রিক্সার নামে হাজার হাজার অটো রিক্সা নগরীতে প্রবেশ করিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অপরদিকে দেদারসে ওয়ার্সসপ গুলোতে তৈরি হচ্ছে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার বডি। যা অল্প সময়ের মধ্যেই একটি পূর্নাঙ্গ অটোরিক্সায় পরিনত হচ্ছে। নগর ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, উচ্চ আদালতের একটি আর্দেশে নিষিদ্ধ করা হয় ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা (ইজি বাইক)। ফলে বিগত মেয়র এর সময়ে নগরীর প্রান কেন্দ্রে নিষিদ্ধ অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয় ট্রাফিক বিভাগ। পর্যায়ক্রমে নগরী থেকে ইজিবাইক বিতারিত করার উদ্যোগ ছিলো তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পরে জনদুর্ভোগের কথা ভেবে শহরের মধ্যে পুনরায় অটো চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী বিসিসি’র লাইসেন্স প্রাপ্ত ২ হাজার ৬১০টি অটোরিক্সা চলাচলের কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তবে চলাচল করছে পাঁচ হাজারের অধিক। ফলে জনদুর্ভোগ লাঘবের থেকে সিমাহিন যানজটে জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে। তবে পুনরায় অটোরিক্সা চলাচলের সিন্ধান্তে লাভবান হচ্ছে শ্রমিক নেতা নামধারী একটি মহল। যারা পুলিশ বিট এর নামে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যারা প্রশাসন এবং ক্ষমতাসিনদের ম্যানেজের নামে শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিনিময়ে কৌশলে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ২ হাজার ৬১০টি অটোরিক্সার বিপরিতে দ্বিগুনের বেশি অবৈধ অটো চলার সুযোগ করে দিয়েছে তারা। এর ফলে নগরীতে বেড়ে গেছে অসহনিয় যানজট। যা নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। যদিও অবৈধ এই অটোরিক্সার বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। যদিও শ্রমিক নামধারীদের সাথে ট্রাফিক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখাগেছে, মুল শহর ছাড়াও নগরীর আশপাশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে অবৈধ অটোরিক্সা। বিশেষ করে লঞ্চ ঘাট থেকে বেলতলা, জেলখানার মোড় থেকে বেলতলা ফেরী ঘাট, কাউনিয়া মরকখোলার পুল থেকে কাগাশুরা, নবগ্রাম রোড, সাগরদী বাজার থেকে টিয়াখালী সড়ক, সাগরদী পুল থেকে ধানগবেষনা সড়ক, নথুল্লাবাদ থেকে দপদপিয়া খেয়াঘাট ও কালিজিরা সড়কে হলুদ রং এর অবৈধ অটোরিক্সা চলাচল করছে। যার বেশিরভাগের নেই নম্বর প্লেট এবং চালক লাইসেন্স। অটোরিক্সা শ্রমিক সূত্রে জানাগেছে, অবৈধ অটোরিক্সা চলাচলের জন্য পুলিশের নামে বিট দেন তারা। ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কেডিসি’র লেদু সিকদার, আলমগীর হোসেন, পলাশপুরের আব্দুর রব ওরফে বিট রব, সোহাগ এবং চৌমাথার করিম সহ বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের নামে মাসে ৩শ করে টাকা চাঁদা আদায় করছে। এদের মধ্যে লেদু ও আব্দুর রব’র সাথে কতিপয় ট্রাফিক পুলিশের যোগাযোগ বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খায়রুল আলম বলেন, কেউ পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজী করলেও এর সাথে ট্রাফিক পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের কোন সদস্য’র অটোরিক্সা পর্যন্ত নেই। তার পরেও কোন ব্যক্তি অভিযোগের প্রমান দিতে পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাই নয়, বরং তার চাকরীও চলে যেতে পারে। উপ-পুলিশ কমিশনার খায়রুল আলম আরো বলেন, নগরীতে যেসব অটোরিক্সা চলাচল করছে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তার সবগুলোই অবৈধ। আমরা এগুলো বন্ধও করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সিটি মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে এগুলো পুনরায় চালাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেই সুযোগে বাইরের অটোরিক্সাগুলোও নগরীতে ঢুকে পড়েছে। তাই বেড়েছে যানজটও। নগরীর কাকলির মোড় থেকে প্রতি মিনিটে অন্তত ৩০টি অটোরিক্সা চলাচল করে থাকে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ২ হাজার ৬১০টি অটোরিক্সা রয়েছে। অনুমোদিত অটোরিক্সাগুলো চলাচল করলে যানজট সৃষ্টি হতো না। সে জন্য আমি মেয়র মহোদয়কে পরামর্শ দিয়েছিলাম যে অবৈধ অটোরিক্সায় ভিন্ন রং করে দেয়ার জন্য। এটা করা হলে অনুমোদিত অটোগুলো চিহ্নিত করা যেত। বাইরে থেকে বা অনুমোদিত অটোরিক্সার বাইরে অন্য কোন অটোরিক্সা নগরীতে প্রবেশের সুযোগ পেতনা। মেয়র মহোদয় আমার প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারনে অবৈধ অটোরিক্সা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, অটোরিক্সার সংখ্যা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে কোন বৈধ এবং কোনটা অবৈধ তা খুঁজে বের করাটা দুস্কর। কেননা একটি অটোরিক্সার টোকেন দিয়ে চলাচল করছে তিন থেকে চারটি। আবার সব অটোগুলোই এক রং এর তাই। এসব কারনে পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে যে অটো নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক বিভাগকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে অবৈধ অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সূত্রে যানাগেছে গেলো ঈদ উল ফিতরের পূর্বে একটি অনুষ্ঠানে সংবাদ কর্মীদের সাথে আলাপকালে তিনি নগরীর অবৈধ অটোরিক্সা বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষনা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। ঈদের পরেই এ কার্যক্রম শুরুর ঘোষনা ছিলো তার। সে জন্য নগরীর আমানতগঞ্জ পাওয়ার হাউজের পেছনে অবৈধ অটোরিক্সা ধ্বংসের জন্য ডাম্পিং জোনও করা হয়। কিন্তু ঈদ শেষে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই ঘোষনার বাস্তবায়ন হয়নি। এ প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হাসান বলেন, অবৈধ অটোরিক্সার বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের নজরে আছে। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। এ নিয়ে কিছু একটা আলোচনাও হয়েছে। তবে সেটা মেয়র মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।