সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগ নিতেই হবে

সুন্দরবন রক্ষায় উদ্যোগ নিতেই হবে
সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্য নিদর্শন ও ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। সুন্দরবন আমদের রক্ষাকবচ। বাংলদেশের উপকূল এলাকার সবুজ প্রাচীর। ২০০৭ সালের সিডোর তার প্রমাণ। সুন্দবন বুক পেতে আগলে না রাখলে সিডরের ভয়াবহতায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চর মাটির সঙ্গে মিশে যেতো। সুন্দরবরন আামদের সেখান থেকে রক্ষা করেছে। সেই সুন্দরবনকে হুমকীর মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের চারপাশে শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুতপ্লান্ট স্থাপনের মতো ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত উদ্বিগ্ন করছে গোটা বিশ্বকে। বিশ্ব ঐতিহ্য ও নিদর্শন সুন্দবন রক্ষা না হলে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যে আন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবেশগত কারণে বিশ্বসংস্থা ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনার দিকে যাচ্ছে। আমাদের উচিত যে কোন কিছুর বিনিময়ে সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষা করা। কোনভাবেই যেন সুন্দবনকে ঝুঁকিতে ফেলা না হয়। সুন্দরবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যে’র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব উদ্বেগজনক মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি সুন্দরবন এলাকায় রামপালসহ বিতর্কিত সব প্রকল্প স্থগিত করে ইউনেস্কোর সুপারিশ বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছে। আজারবাইজনের বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম অধিবেশনের জন্য প্রস্তাবিত এজেন্ডায় সুন্দরবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য’-এর তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি গৃহিত হওয়ার আগেই অনতিবিলম্বে সুন্দরবন ও এর আশপাশের সংরক্ষিত অঞ্চলে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রসহ চলমান সব প্রকল্প স্থগিত করে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ও সময়াবদ্ধ অন্যন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম অধিবেশনের প্রস্তাবিত এজেন্ডায় সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব প্রমাণ করে, ‘রামপালসহ অন্যান্য প্রকল্পের কারণে সুন্দরবন ঝুঁকিতে আছে। আমাদের দীর্ঘদিনের এমন আশঙ্কা ও উদ্বেগ অমূলক ছিল না। আমরা মনে করি, কোন ধরণের কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই সুন্দরবনের সন্নিকটে এধরণের ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি উদ্যোগে বৈশ্বিক ও স্থানীয় উদ্বেগ ও পরামর্শ উপেক্ষা করায় আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আসন্ন বাকু মিটিংয়ের আগেই অনতিবিলম্বে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পন গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বর অন্যতম শাসমূলীয় বন (ম্যানগ্রফ ফরেস্ট) সুন্দরবন কেবল সৌন্দর্যই নয়, আমাদের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাকারী অরণ্য। এটা রক্ষা না হলে পুরো বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে পরবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষা ও সুরক্ষায় সরকারি প্রচেষ্টা শক্তিশালী করার কথা ছিল। কিন্তু কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ও যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই সুন্দরবনের মত বিশ্ব ঐতিহ্য ঝুঁকিতে রেখে রামপালসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের অঙ্গীকারের পরিপন্থী। ইউনেস্কোর এ প্রস্তাবের পর আর নির্বিকার থাকার সুযোগ নেই। অবিলম্বে সুন্দরবন সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা চাই, সুন্দবন বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক। তাঁর গায়ে যেন কোন কালো তিলক এঁকে দেওয়া না হয়। সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগ নিতেই হবে। বাংলাদেশ সরকার যেন দ্রুত সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষায় সেই উদ্যোগ নেয়।