স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে ১৭০০ কোটি টাকা

দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে স্কুল ব্যাংকিং। বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রায় ২৩ লাক্ষাধিক ছেলে-মেয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেছে। মোট হিসাবের ৩৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ খোলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে। ৬১ দশমিক ৪৩ শতাংশ খোলা হয়েছে শহরাঞ্চলে।
এসব হিসাবে তারা প্রায় ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা জমা রেখেছে। গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে স্থিতির পরিমাণ মোট স্থিতির যথাক্রমে ২৫ দশমিক ২৭ এবং ৭৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষাথীর্দের ব্যাংকিং সেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচি গ্রহণে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে দেশের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসাই স্কুল ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য। ব্যাংকগুলো ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাথীর্দের ব্যাংক হিসাব খুলছে।
এছাড়া ব্যাংক হিসাবে আকর্ষণীয় মুনাফা প্রদান, সার্ভিস চার্জ গ্রহণ না করা, ডেবিট কার্ড প্রদানসহ বিভিন্ন বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং স্কুল কেন্দ্রিক আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রসার ঘটানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মার্চ শেষে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৩১টি। এক বছরের ব্যবধানে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০টি। অর্থাৎ এক বছরে হিসাব সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ সময়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাবে জমানো আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব সংখ্যা ও টাকা জমার স্থিতির দিক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মোট ১৬ লাখ ১২ হাজার ১১৩টি ব্যাংক-হিসাব খুলেছে, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬৯ দশমিক ২২ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে, যা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মোট স্থিতির ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুললেও মোট স্থিতির মাত্র ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ সংগ্রহ করেছে।
শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৫ লাখ ৯ হাজার ৪৫৫ টি হিসাব খুলেছে শিক্ষার্থীরা যা মোট হিসাবের ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অপরদিকে, স্থিতির ভিত্তিতেও শীর্ষে অবস্থান করছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। তাদের সংগৃহীত আমানত প্রায় ৪৯৩ কোটি টাকা, যা মোট স্থিতির ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত ৫৭:৪৩। ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং সেবাকে জনপ্রিয় করতে কোনো কোনো ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয় উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে।