হলি আর্টিজেনে জঙ্গী হামলা কলঙ্ক ঘোচাতে হবে

গতকাল ১ জুলাই ছিল হলি আর্টিজেন বেকারিতে নির্মম হামলার দিন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ইতিহাসের এক জঘন্য ঘটনা ঘটে ঢাকার হলি আর্টিজেন বেকারিতে। আভিজাত্যপূর্ণ রেস্তোঁরায় থাকা গ্রাহকসহ সবাইকে জিম্মি করে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দেশি বিদেশি ২২ নিরীহ ব্যক্তিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। উগ্র মৌলবাদী চিন্তার একদল দিকভ্রান্ত যুবক ইসলামের নামে ওই হত্যাকা- ঘটায়। যা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে একটা কলঙ্ক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হলি আর্টিজেনে জঙ্গী হামলা কলঙ্ক ঘোচাতে হবে। উগ্র ধর্মান্ধ চিন্তার বিনাশ ঘটুক এমন প্রত্যাশা সবার।
১ ও ২ জুলাই ভয়াবহ হলি আর্টিজানে সংঘটিত জঙ্গী হামলা দিবস। ১ জুলাই রাত থেকে পরদন সকাল পর্যন্ত দেশি বিদেশি ২২ নীরিহ প্রাণ কেড়ে নেয় জঙ্গীরা। কেবল ধর্মের দোহাই দিয়ে নীরিহ এইসব মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। লোমহর্ষক ওই রাতের বর্ণনা এবং দৃশ্য মানুষের অন্তরআত্মায় আঘাত করেছে। যদিও আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত সময়ে জঙ্গীদের নিবৃত্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তার আগেই প্রাণ যায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নীরিহ ২২ জনের। সেই আঘাতের ক্ষতচিহ্ন বক্ষে ধারণ করে চলেছেন হত্যার শিকার সন্তানদের বাবা-মা, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ গোটা দেশ। ওই রকম নির্মম ঘটনা যেন আমাদের প্রত্যক্ষ করতে না হয়।
হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় হামলার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীরা নানা তৎপরাতা চালায়। ওইসব হামলায় অনেক নীরিহ মানুষের প্রাণ যায়। যদিও আমাদের প্রশাসন জঙ্গী তৎপরতা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। কেবল হলি আর্টিজেন নয়, আর দেশের কোথাও নির্মম ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বর্তমান করোনার বৈশ্যিক মহামারীর মধ্যেও আমরা বলতে চাই কোনভাবেই ধর্মকে ব্যবহার করে যেন মানুষ হত্যা না হয়। একইভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলায়ও যেন নেতিবাচক মন্তব্য না হয়। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মানুষ হত্যাকে স্বীকৃতি দিতে চায় তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলাম ধর্মকে সামনে রেখে যারা এমন ঘৃণ্য কাজ করছে তারা মানুষ নামের কলঙ্ক। করোনা সময় আমাদের বিশ^মানবতার কথা বলতে হবে।
এখনো দেশের পাড়া-মহল্লায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষাসহ ধর্মের নামে নানান ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটানোর নামে ওইসব প্রতিষ্ঠান বাস্তবে কি করছে সেগুলো গোয়ান্দা নজরদারীতে রাখা দরকার। তা না হলে পীস স্কুলের (শান্তি) মতো কোনদিন আবার শুনতে হবে বাংলাদেশ বিরোধীরা অশান্তির নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যারা আবার কোন এক আর্টিজানে হামলা চালাতে রশদ জোগাবে। সেই রসদ যাতে যোগাতে না পারে সেব্যাপারে সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শূন্য সহিষ্ণু (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ করতেই হবে।
আমরা চাই, আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বিশ^বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতিবান হয়ে বেড়ে উঠুক। তারা ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে চলুক। কিন্তু কোনভাবেই যেন জঙ্গী, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত হতে না পারে। সে ব্যাপারে পরিবার, সমাজ এবং রাস্ট্রকে সমান ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে আগামীতে আর কোন আর্টিজানে ভয়বহ হামলার ঘটনা দেখতে হবে না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ শান্তির বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সেই প্রত্যাশা থাকল হলি আর্টিজেন রেস্তোঁরায় হামলার পঞ্চম বার্ষিকীতে।
আমরা কঠিন এক সময় অতিবাহিত করছি। করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও আজ হালি আর্টিজান রেস্তোঁরায় জঙ্গী হামলায় নিহতদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। একই সঙ্গে হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় জঙ্গী হামলার কলঙ্ক ঘোচানোর আহ্বান জানাচ্ছি।