হামাগুড়ি দিয়ে জেলা প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর চাইলেন প্রতিবন্ধি রানা

বাসা ভাড়া দিয়ে আর এই শহরে থাকতে পারছেন না বরিশাল নগরীর সদর রোডের বহুল পরিচিত শারীরিক প্রতিবন্ধি মো. রানা (৪৫)। মায়ের পান-সিগারেট বিক্রির আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহের পর বাসা ভাড়া টানতে পারছেন না তারা। বাধ্য হয়ে গত বুধবার সকালে হামাগুড়ি দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরের জন্য আবেদন করেছেন রানা। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
রানার মা হোসনেয়ারা নগরীর সদর রোডের বিবিরপুকুর এলাকায় গত ৪ দশক ধরে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। রানার বয়স যখন ৯ বছর তখন তারা বাবা এনায়েত সিকদার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাদের এক মেয়ে রিতাকে ১০ বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি রানাকে নিয়েই তার মায়ের সংসার। হাতে-পায়ে শক্তি নেই রানার। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে পারলেও স্থুলকার দেহের অধিকারী রানাকে গোসল, প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন এবং খাইয়ে দিতে হয় তার মায়ের। ছেলের সেবাযতœ আর পান-সিগারেট বিক্রি করে সময় কাটে রানার মায়ের। পান সিগারেট বিক্রির অর্থ দিয়ে কোনমতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনকাটে তাদের। এই শহরে বা পূর্বপুরুষের কোন ভিটাও নেই তাদের। এ অবস্থায় প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে রানা ও তার মায়ের। বর্তমানে তারা ভাড়া থাকছেন নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের টাউন স্কুল সংলগ্ন মিন্টু মিয়ার বাড়িতে। ঘর পাবার জন্য এক শুভাকাংখির পরামর্শে গতকাল হামাগুড়ি দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান রানা। কিন্তু জেলা প্রশাসক ওই সময় অফিসে না থাকায় আবেদন জমা দেন সংশ্লিস্ট দপ্তরে।
রানার মা হোসনেয়ারা বলেন, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহ ও ভূমিহীনদের লাখ লাখ ঘর উপহার দিয়েছে। কিন্তু তারা ভূমি এবং গৃহহীন হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটা ঘর পাননি। অর্থের অভাবে র ভাড়া বাসায় থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের। এ অবস্থায় চিরকুমার প্রতিবন্ধি ছেলেটিকে নিয়ে কোথায় থাকবেন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তার মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধি ছেলেটাকে কে দেখাশোনা করবে- এই দুশ্চিন্তা ভর করছে তার উপর। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটা ঘর পেলে অন্তত মাথা গোজার একটা ঠাই হবে বলে আশা করেন ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হোসনেয়ারা।
মো. রানা বলেন, আমাগো থাকার জায়গা নেই। সরকার যদি একটা ঘর দেয় তাহলে মাকে নিয়ে সেখানে থাকতে পারবো। আমাগোর আর প্রতিমাসে বাসা ভাড়া লাগবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটা ঘর পাবার আকুতি জানিয়েছেন রানা।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধি রানার একটি ঘর পাওয়ার আবেদন তিনি পেয়েছেন। আবেদন যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রানাকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর উপহার দেয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
মুজিব বর্ষে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের লাখ লাখ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দফায় জেলায় ১ হাজার ৫শ’ ৫৬টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৫শ’ ৪৯টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ ও বানারীপাড়া উপজেলায় কিছু ঘরের নির্মান কাজ এখনও চলছে। এর মধ্যেই তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আরও ১ হাজার ৮শ’ ৫৬টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।