হিজলায় নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে বিপুল পরিমান ইলিশ আটক, বিক্রির অভিযোগ ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

হিজলায় নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে বিপুল পরিমান ইলিশ আটক, বিক্রির অভিযোগ ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে অন্তত ১৫ মন ইলিশ আটক করে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের হিজলা থানার ওসি এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। হিজলা-গৌরবদীর ৮ নম্বর ঘাটের জসিম সরদারের কাছে এই ইলিশ বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হিজলা থানার ওসি তার ভগ্নিপতিকে সাথে নিয়ে ইলিশ শিকার বিরোধী অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে হিজলা থানার ওসি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে জানতে হিজলার মৎস্য কর্মকর্তাকে ফোন দেয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। 

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ৭ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৭ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন, সংরক্ষন ও ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করে সরকার। গত শুক্রবার ছিলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। ওইদিন হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম পলাশ এবং থানার ওসি মো. ইউনুছ মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ধুলখোলা বাজার, দেবুয়া রাস্তার মাথা এবং হরিনাথপুর বাজারের পূর্বপাশের গ্রামের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তল্লাশী চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযান চলাকালে ধুলখোলা বাজারের বিভিন্ন দোকান ও বাসা বাড়িতে ৮টি রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ) বোঝাই ইলিশ উদ্ধার করে তারা। ফ্রিজ জব্দ না করলেও ৮টি ফ্রিজের সব ইলিশ নিয়ে যায় অভিযান পরিচালনাকারীরা। পরে তারা দেবুয়া রাস্তার মাথা এলাকার বিভিন্ন বাসা তল্লাশী করে ১০ বস্তা ইলিশ ও ৩ বস্তা নতুন কারেন্ট জাল নিয়ে যায়। হরিনাথপুর বাজারের পূর্বদিকের গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতেও তল্লাশী চালায় তারা। এ সময় ২ ফ্রিজ ইলিশ নিয়ে যায় তারা। 

ওই অভিযানে পুলিশের সহায়তাকারী বেসামরিক সদস্যরা জানান, দিনভর অভিযানের এক পর্যায়ে ধুলখোলার মাটিয়ালা থেকে পুলিশের ব্যবহৃত স্পীডবোটে পাঠিয়ে অন্তত ১৫ মন ইলিশ হিজলা-গৌরবদী এলাকার ৮ নম্বর ঘাটের জসিম সরদারের কাছে বিক্রি করে মৎস্য কর্মকর্তা ও ওসি। মৌলভীরহাট কাশেমউলুম মাদ্রাসার ৬ কেজি ইলিশ বিনামূল্যে বিতরন করে তারা। বাকী ইলিশ ওসি এবং মৎস্য কর্মকর্তা নিজেরা নিয়ে যায়। 

সংশ্লিস্টরা জানান, ৭ অক্টোবর মধ্যরাতে অভিযান শুরুর পর হিজলায় যান ওসি’র বোন জামাতা আল-আমিন।  তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান ওসি। বিভিন্ন স্থানে অভিযানে গেলে জেলে সহ সংশ্লিস্টদের সাথে দরকষাকষি করে ওসি’র পক্ষে আর্থিক সুবিধা আদায় করতেন ভগ্নিপতি আল-আমিন। গত ১৮ অক্টোবর তিনি হিজলা ত্যাগ করে বরিশাল ফিরে যান। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হিজলা থানার ওসি মো. ইউনুছ মিয়া মুঠোফোনে বলেন, শুক্রবারের অভিযানে ৪ মন ইলিশ উদ্ধার হয়েছে। সব ইলিশ বিভন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিনামূল্যে বিতরন হয়েছে। জব্দকৃত ইলিশ কারো কাছে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি। ভগ্নিপতিকে নিয়ে কোন অভিযান চালানো হয়নি বলেও তিনি দাবী করেন। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম পলাশের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে এ বিষয়ে বলেন, শুক্রবার হিজলায় মৎস্য কর্মকর্তা ও পুলিশ দিনভর অভিযান চালিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ইলিশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরন করার কবর তাকে দেয়া হয়েছে। আটক ইলিশ বাইরে বিক্রির কোন অভিযোগ তিনি জানেন না। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারী মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ##