২য় বার প্রার্থী হওয়া রিপাবলিকানদের মধ্যে দুর্বল ট্রাম্প

২য় বার প্রার্থী হওয়া রিপাবলিকানদের মধ্যে দুর্বল ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মৌলিক কাজগুলো প্রত্যাশার তুলনায় খারাপ করছেন বলে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, একই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্টরা গড়ে যা করতেন, ট্রাম্প তাদের চেয়েও খারাপ করছেন। তবে এটি প্রমাণ করা কঠিন।

কিন্তু অন্তত একটি প্রধান সূচকে ইঙ্গিত মিলেছে, আসলেই একই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প রিপাবলিকানদের চেয়ে খারাপ করছেন। হোয়াইট হাউসে তার দলের প্রেসিডেন্ট হওয়া দ্বিতীয় মেয়াদের প্রার্থীদের তুলনায় ট্রাম্পের গড় বাড়ছে বলে মনে হয় না।

প্রেসিডেন্ট পদ এবং কংগ্রেসের প্রতিযোগিতা সম্পর্কে চলতি গ্রীষ্মে করা স্বাক্ষাৎকারভিত্তিক এক লাইভ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এছাড়া একই জরিপে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীরা রিপাবলিকানদের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।

এ ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়, অভ্যন্তরীণ জরিপে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের দৌড়ে রিপাবলিকান প্রার্থীরা ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে কম পছন্দের। এই জরিপে প্রেসিডেন্ট পদের ফলও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ডিস্ট্রিক্টগুলোতেও যে ট্রাম্প দুর্বল তা এই তত্ত্ব নির্দেশ করে।

ঘটনাটি অস্বাভাবিক যে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ডেমোক্র্যাটদের চেয়েও বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বেশি প্রশস্ত হচ্ছে। যদি এটি ঘটে তবে তা হবে ঐতিহাসিক। অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন, হাউসে রিপাবলিকানদের চেয়ে ভালো করবেন ট্রাম্প। এর সহজ কারণ হচ্ছে হাউসে বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটরা দ্বিতীয় মেয়াদে এগিয়ে থাকবেন। প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিযোগিতায় একই সুবিধা পাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বেশি ভালো করেছেন। যা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ, উচ্চকক্ষ এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেখা গেছে। গত ৮০ বছরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ১৩ বারের মধ্যে ১০ বারই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন। তবে নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে তাদের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেয়েছে।

১৯৪০ সালের পর ৮টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন প্রার্থীরা; কিন্তু সেই প্রার্থীর দল হাউসের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব নির্বাচনে হাউসে তার দলের সদস্যদের চেয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রার্থী ৮ বারের মধ্যে ৬ বারই বেশি ভালো করেছে; যার হার ৭৫ শতাংশ। এই সময়ে হাউসের প্রতিযোগিদের চেয়ে প্রেসিডেন্ট তিন পয়েন্টের বেশি খারাপ করেননি।

আমরা যদি সাম্প্রতিক ২০১২ সালের ঘটনা দেখি, তখন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পপুলার ভোটে ৪ পয়েন্টে জয়লাভ করেন। যেখানে হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা ডেমোক্র্যাটরা মাত্র ১ পয়েন্ট ব্যবধানে পপুলার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটদের ফলাফলের চেয়ে তিন পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ওবামা।

অবশ্য আটটি নির্বাচন একটি বড় নির্বাচনী সেট নয়। তবে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন করেনি এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এটিকে সম্প্রসারিত করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আমরা এখনও আশা করতে পারি, হাউসে যে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তারা হাউসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে ভালো করে।

এ ক্ষেত্রে আমরা আশা করতে পারি যে, হাউজে যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তারা হাউজের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে ভালো করে। যদি এসব নির্বাচনকে আমাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলে দেখব যে গত ৮০ বছরে যে দলের নিয়ন্ত্রণে হাউস রয়েছে সেই দল ১৫ বারের মধ্যে ১৩ বার (৮৭ শতাংশ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে হাউসের নির্বাচনে ভালো করেছে।

অন্যভাবে বললে, হাউসে সংখ্যালঘু দল ১৫ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৩ বার ভালো করেছে। এসব ক্ষেত্রে হয় তারা হোয়াইট হাউস নিয়ন্ত্রণ করেছে অথবা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেননি। এ সময় তারা বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, নির্বাচন তেমন প্রতিদ্বন্দ্বতাপূর্ণ হয়নি।

গত ৮০ বছরে যেসব নির্বাচনে সংসদের সংখ্যালঘু দল হোয়াইট হাউস নিয়ন্ত্রণ করেছে অথবা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩ পয়েন্ট বা তার বেশি পেয়েছে। বর্তমানে ট্রাম্প সেই তুলনায় ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন। কারণ হাউসের রিপাবলিকানদের চেয়ে তার ২ পয়েন্ট কম।

মজার বিষয় হল- ২০২০ সালের অধিকাংশ সময় জেনেরিক কংগ্রেসনাল ব্যালট একই ধরনের ছিল। এ বছরের অধিকাংশ সময় ট্রাম্প হাউসের রিপাবলিকানদের চেয়ে ভালো করেছেন। এখন পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে হাউসে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের চেয়ে ভালো করছেন, কারণ ভোটাররা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিভক্ত রায় দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যেতে পারেন বলে তাদের ধারণা। যে কারণে তারা ডেমোক্র্যাটদের পুরো ক্ষমতা দিতে চায় না। ভোটারদের বিশ্বাসও আছে যে, ট্রাম্প জিতবেন, হারবেন না।

দু’টি কারণে ট্রাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন- একটি হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি ঠিকমত সামাল দিতে না পারা এবং অন্যটি বর্ণবাদ সম্পর্কিত। চলতি বছরে গ্রীষ্মে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এবং জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকা-ের পর বর্ণবাদ সম্পর্ক সংবাদে পরিণত হয়েছে।

করোনাভাইরাস ও বর্ণবাদ ইস্যুতে ট্রাম্পের অ্যাপ্রুভাল রেটিং ৩০ এর কোটায়। হাউসের রিপাবলিকানদের কোনও ধরনের শাস্তি ছাড়াই ভোটাররা ট্রাম্পকে তার কর্মকা-ের জন্য দোষারোপ করতে পারেন। ট্রাম্পের জন্য ভালো খবর হচ্ছে তিনি যদি মৌলিক কর্মকা-ের চেয়েও খারাপ করেন, তাহলে তার খুব বেশি রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন না করেও অবস্থার উন্নতির সুযোগ রয়েছে।