৫ টুকরা পরকীয়া প্রেমিক

৫ টুকরা পরকীয়া প্রেমিক


রাজধানীতে পরকীয়া প্রেমিককে খুনের পর লাশ পাঁচ টুকরা করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সজিব হাসান (৩৩) নামে ওই যুবকে খুনের অভিযোগে শাহানাজ পারভিন (৫০) নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। ওই নারী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেন পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকালে ওয়ারি থেকে সজিবের পাঁচ টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পুলিশের ওয়ারি জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ওয়ারী থানাধীন ১৭/১ কে এম দাস লেন হোল্ডিংয়ের ৪র্থ তলায় ঘটনাটি ঘটে। নিহত সজিব হাসানকে সকাল আনুমানিক ৮টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে হত্যাকারী শাহানাজ পারভিন ছুরি দিয়ে হত্যা করে। পরে তার দু’হাত, দু’পা ও মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে।

পুলিশ জানায়, সজিব হাসানের সঙ্গে শাহানাজ পারভিনের পরকীয়ার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দুই দিন আগে শাহানাজ পারভিন তার স্বামীর সংসার, ছেলে-মেয়ে রেখে স্বর্ণাংলকার, কাপড়-চোপড় ও টাকা এবং লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সজিবের সঙ্গে দেখা করে এবং তার সঙ্গে অবস্থান করে। এরপর সজিব হাসান টাকা-পয়সা ও স্বর্ণাংলকার নিয়ে বিক্রি করতে চাইলে ঘাতক শাহানাজের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে সজিব হাসান শাহানাজকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে চাইলে শাহানাজ ছুরি কেড়ে নিয়ে সজিব হাসানের বুকের নিচে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। হত্যার পর তার দু’হাত, দু’পা বিছিন্ন করা হয়।

পুলিশের ওয়ারি জোনের সহকারী কমিশনার মো. হান্নানুল ইসলাম বলেন, ঘটনার আগে ওই নারী বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তার প্রকৃত স্বামী থানায় একটি জিডি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরে তদন্ত চলছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, শীল (ছুরি ও শীল দ্বারা হাত পা বিচ্ছিন্ন করে থাকে) ও রক্তমাখা কাপড়। খন্ডিত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তাদের পরিচয়ের কথা জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী মেয়েকে কলেজে আনা-নেয়ার পথে সজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। এরপর থেকে তারা মেলামেশা করে আসছিলেন। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়াও নিয়েছিলেন। শাহানাজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করেন। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, হত্যার পর গোঙ্গানীর শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পালানোর সময় শাহানাজকে আটক করেন তারা। পরে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। নিহত সজিব হাসান শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। বাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, মৃত সজিব ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডের আতিয়ার রহমানের ছেলে। আর শাহনাজ পারভিন তার স্বামী জসিম উদ্দিন মজুমদারকে নিয়ে ওয়ারির আর কে মিশন রোডের ৪৯/২ নং বাড়িতে থাকতেন।

পুলিশ বলছে, পাঁচ বছর ধরে সজীবের সঙ্গে পরকিয়া সম্পর্ক ছিল শাহনাজের। স্বামীবাগের বাসাটি সজিব ভাড়া নেন শাহনাজকে তার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে। শাহনাজ তার স্বামীর বাসা থেকে তিন দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ পালিয়ে সজিবের বাসায় আসে। জিডি হওয়ার পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শাহনাজের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজিবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে শাহনাজকে পাওয়ার পাশাপাশি সজীবের মরদেহ মেলে। মরদেহের তিন টুকরো ঘরের মেঝেতে এবং দুই টুকরো টয়লেটে পড়েছিল।

ইফতেখার ইসলাম বলেন, সজিবের সঙ্গে থাকতে গিয়ে শাহনাজ বুঝতে পারেন, তার সঙ্গে অন্য মেয়েরও সম্পর্ক রয়েছে। সজিবের মুখ্য উদ্দেশ্য শাহনাজের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেওয়া।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপ-কমিশানর বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় শাহনাজ সজিবকে হত্যা করে। শাহনাজ বলেন, সজিবের সঙ্গে তার প্রথমে ঝগড়া হয়, তখন সজীব তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরি শাহনাজের হাতে চলে আসে। তখন পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে সজীব মারা যান।

ইফতেখার ইসলাম বলেন, হত্যার পর রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে সজীবের মরদেহ পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ নিজেই। এ সময় নিজের হাতও কেটে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) পাঠানো হয়েছে।