‘যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্টু রাষ্ট্র’

উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক জেফরি স্যাকস বলেছেন, চলমান বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার না হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের পরিচালক।
‘জনগণের প্রয়োজনের সময়ে জাতিসংঘ বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশে জাতিসংঘের দপ্তর ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
শুক্রবার ( ১৮ সেপ্টেম্বর) সিপিএস এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
জেফরি স্যাকস বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ প্রযুক্তি ও চ্যালেঞ্জ কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকে না এবং এজন্য আঞ্চলিক সহযোাগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী আছে এবং এদের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক বিরোধ কাম্য হতে পারে না। বরং তাদের বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমি বুঝতে পারছি যে, আমি খুব সহজভাবে যা ঘটা উচিত সেটি বলছি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে সহযোগিতা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দরকার। কারন, এটি না হলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জেফরি স্যাকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে ভাগ করে দেওয়াটা একটি ভয়ঙ্কর ধারণা।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধ হোক এটি চাই না। পৃথিবীতে এমন কোনো কিছু ঘটেনি যে, পৃথিবীকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দুই ভাগ হয়ে যেতে হবে। এটি একটি ভয়ঙ্কর ধারণা ও বোকামি। আমাদের উচিত হবে সহযোগিতার ওপর মনোযোগ দেওয়া এবং আমার বিবেচনায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল একে অপরকে সহযোগিতা করা দরকার।
জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিরোধ আছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক দেশ তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে জাতিসংঘ সমর্থন করে না উল্লেখ করে স্যাকস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য ভারত দাবিদার। কিন্তু এটির চরম বিরোধিতা করে পাকিস্তান। একইভাবে জাপানের বিষয়ে বিরোধিতা করে চীন, ব্রাজিলের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা। সেজন্য প্রতিবেশীরাই সাধারণভাবে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।
জেফ বেজোস, বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ ও ইলন মাস্ক এই চারজন আমেরিকানের কাছে ৫০,০০০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আছে এবং এর ফলে মুষ্টিমেয় লোকের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে কোন সমাজ চলতে পারে না। যে পৃথিবীতে দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য যথেষ্ট কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না সেখানে এটি একটি অত্যন্ত বাজে ব্যবস্থা।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা গরিব দেশগুলির দারিদ্র্য দূর করার কাঠামো দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এ কারনে কোটি কোটি মানুষ মানুষ কষ্টে আছে যদিও পৃথিবীতে সম্পদের অভাব নেই বলে তিনি জানান।
মার্কিন এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই এবং এ জন্য শুধুমাত্র তাদের সহযোগিতাই যথেষ্ট।
ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করে স্যাকস বলেন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পরে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে পারছে না। আমার মনে হয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্ট রাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এবং গোটা বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন দেশকে যেকোন একটি দেশ বেছে নেওয়ার জন্য বলছে। এটিই হচ্ছে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি।