অনুমতি ছাড়াই বিনোদনের জন্য ওড়ানো যাবে ড্রোন

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমতি ছাড়াই বিনোদনের জন্য ছোট আকারের ড্রোন আকাশে উড্ডয়ন করানো যাবে। তবে এই ড্রোনের ওজন হবে পাঁচ কেজির নিচে ও তার উড্ডয়ন অবশ্যই সমতল ভূমি থেকে ১০০ ফিটের মধ্যে হতে হবে।
মঙ্গলবার বেবিচক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্কশপে ড্রোনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড, রেগুলেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইমরানুর রহমান।
ওয়ার্কশপে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, ড্রোন পরিচালনা সহজতর করার জন্য মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি জারি করে। ড্রোন নীতিমালা কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বা সংস্থার স্ব স্ব কার্যপদ্ধতি প্রস্তুত ও প্রকাশের বিধানও এই নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। আমি আশা করছি, এই নীতিমালায় ড্রোন পরিচালনা, অনুমোদন, নিবন্ধন, আমদানি সহজ হবে ও বাংলাদেশের জনগণ সুফল পাবে।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইমরানুর রহমান জানান, ড্রোন উড্ডয়নের এলাকা বা জোনকে গ্রিন, ইয়েলো ও রেড এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সংরক্ষিত এলাকা, সামরিক এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, জনসমাগমপূর্ণ এলাকাকে ইয়েলো জোন ধরা হয়েছে। তাছাড়া নিষিদ্ধ এলাকা, বিপজ্জনক এলাকা, বিমানবন্দর এলাকা, কেপিআই ইত্যাদিকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে। এই দুই ধরনের জোন বাদে সব জোনকে গ্রিন জোন ধরা হয়েছে।
গ্রিন জোনে যে কেউ অনুমতি ছাড়া ১০০ ফুটের মধ্যে ড্রোন ওড়াতে পারবে। তবে ড্রোন যদি ১০০ ফুটের বেশি উড্ডয়ন করাতে হয় সে ক্ষেত্রে বেবিচক থেকে অনুমতি নিতে হবে। সম্প্রতি ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়ার্কশপে জানানো হয়- ড্রোন উড়ানোর উদ্দেশ্য বিবেচনায় একে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণি হচ্ছে বিনোদনের (খেলার) জন্য। ‘খ’ শ্রেণি বলতে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা কোন ব্যক্তির শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য। ‘গ’ শ্রেণি জরিপ, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র, পণ্য পরিবহনের মতো বাণিজ্যিক ও পেশাদার কাজের জন্য এবং ‘ঘ’ শ্রেণি রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। ‘ক’ ও ‘ঘ’ শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়নের জন্য কারও অনুমতি লাগবে না। তবে ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির ড্রোন গ্রিন, ইয়েলো, রেড যেকোনো জোনে উড্ডয়নের জন্য বেবিচকের নিয়মাবলি মেনে অনুমতি নিতে হবে। ‘গ’ শ্রেণির ড্রোনের জন্য ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি যাতে রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, স্যাটেলাইট ও অ্যাভিয়েশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে তাই বিটিআরসি থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।
বেবিচক আরও জানায়, ক, খ ও গ শ্রেণি চাইলে ড্রোনের জন্য বেবিচকের কাছ থেকে নিবন্ধন ও পরিচিতি নম্বর নিতে পারে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শিগগিরই বেবিচকের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।
ওপরের নির্দেশনা ছাড়াও ক, খ, গ শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়নে আরও কয়েকটি সাধারণ নির্দেশনা দিয়েছে বেবিচক। এই তিন শ্রেণির ড্রোন রাতে (সূর্যাস্ত ও উদয়ের মাঝামাঝি সময়ে) উড্ডয়ন করা যাবে না। বিশেষ অনুমতি ছাড়া ভিভিআইপির সভা-সমাবেশের তিন দিন আগে থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে। খোলা স্থানে সভা, সমাবেশ, জাতীয়-আন্তর্জাতিক খেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বিশেষ অনুমতি ছাড়া ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে। সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে ‘গ্রিন জোন’ ছাড়া অন্য যেকোনো জোনে ড্রোন ওড়ানোর আগে স্থানীয় থানায় লিখিতভাবে উড়ানোর বিষয়টি অবহিত করতে হবে। ‘ক’ শ্রেণি ব্যতীত অন্য যেকোনো ড্রোন উড়ানোর জন্য ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর ও শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের পাস হতে হবে।