অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করুন

অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করুন

বরিশাল মহানগরে অবৈধ যানবাহন চলাচল কমছে না। এর সঙ্গে নগরের মধ্যে সিএনজি এবং ইজিবাইক স্ট্যা- হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। বিশেষ করে নগরীর জেল খানার মোড়, বিবির পুকুর পাড়, কাকলীর মোড়, নৌবন্দর এলাকা, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, আদালত চত্ত্বরসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এসব স্ট্যান্ড উচ্ছেদে নগর ভবন কিংবা ট্রাফিক পুলিশের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে ক্ষণে ক্ষণে যানযট লেগে যাচ্ছে। অবৈধ যানবাহনের সঙ্গে অবৈধ স্ট্যা- নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।

২০০৯ সাল থেকে অস্বাভাবিকহারে রিকশা ভাড়া বৃদ্ধি পায়। অধিক ভাড়া আদায়ে হয়রানীর শিকার হতে থাকে সাধারণ যাত্রীরা। তখন নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে বরিশাল মহানগরে গণপরিবহণ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। ওই সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে আসে নগরবাসীর মধ্যে। তখন নগরে চালু করা হয় সিটি বাস। কম ভাড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারতো নাগরিকরা। একই সময় আমদানী করা হয় ব্যাটারীচালিত হলুদ ইজিবাইক। এই দুই গণপরিবহণ যাত্রীসেবায় সাড়া ফেলে। কিন্তু অধিক মুনাফালোভ নাগরিকদের সুবিধা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। বরিশাল মহানগর থেকে এক পর্যায়ে উঠে যায় সিটি বাস। আর বৈধ ইজিবাইকের চেয়ে অবৈধ বাইকের সংখ্যা কয়েগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে নাগরিক সুবিধার চেয়ে অসুবিধা সৃষ্টি হতে থাকে। বর্তমানে অবৈধ যানের তান্ডবে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।

সিটি বাস উঠে যাওয়ায় কিংবা উঠিয়ে দেওয়ায় ইজিবাইকের ওপর নির্ভর করতে হয় নাগরিকদের। ওই সময় নগর ভবন দেড় হাজার ব্যটারিচালিত ইজিবাইকের অনুমোদন দেয়। মেয়র পরিবর্তন হওয়ার পর আরও এক হাজারের বেশি ইজি বাইকের অনুমোদন দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী নগরে  অনুমতি পাওয়া ২ হাজার ৬১০টি হলুদ বাইক চলাচল করার কথা। ওই সংখ্যক ইজিবাইক থাকলে অসুবিধা ছিল না। নগরে যানযটও হতো না। কিন্তু বর্তমানে ব্যাটারীচালিত ও গ্যাসচালিত ইজিবাইক চলছে ১০ হাজারের বেশি। বৈধর চেয়ে অবৈধ যানের দাপটে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অবৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুবিধার চেয়ে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এই অসুবিধার জন্য নগর ভবন যেমন দায়ি তেমনি পুলিশ বিভাগও দায়ি। কে নিয়ন্ত্রণ করবে মহানগরের যানবাহন? পুলিশ না কি সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের দাবি মহানগরে যানবাহন চালাচলের লাইসেন্স দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। তাই এর তদারকী ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে নগর ভবনের হাতে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি মটরযান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ট্রাফিট পুলিশের। তাই সমস্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও হবে পুলিশের। মহানগরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নগর ভবন এবং পুলিশের মধ্যে একধরণের  স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধ শওকত হোসেন হিরণ উতরে গেলেও সমস্যায় পড়েন বিএনপি সমর্থিত মেয়র আহসান হাবিব কামাল। তাঁর সময় মহানগরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয়।

প্রভাব খাটিয়ে মহানগরে অবৈধ যানবাহন চলাচল শুরুর জন্য যেমন এক পক্ষ দায়ি। তেমনি অবৈধ যানবাহন চলাচলে অর্থ বাণিজ্য করে বৈধতার চেষ্টার জন্যও অন্য পক্ষ দায়ি। হলুদ বাইক ভালো না-এর দোহাই দিয়ে, নীল বাইক আমদানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে মহানগরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে মহানগরের মধ্যে ইজিবাইকের স্ট্যান্ড থাকায় থেকে থেকেই যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে। সাবেক এক মেয়রের সময় ইজিবাইক বাণিজ্যের অভিযোগ বেশি ছিল। বর্তমানে সেই অভিযোগ নাই। তবে মহানগরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নগর ভবনের তেমন উদ্যোগও লক্ষ করা হচ্ছে না।

পুলিশ কিংবা নগর ভবন, অভিযোগ যার বিরুদ্ধেই উঠুক, দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। সেই দুর্ভোগ কমাতে হবে। কার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ওঠে সাধারণ মানুষ সেটা জানতে চায় না। দ্রুত নগর ভবন থেকে মহানগরের সকল ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যেগ নেওয়া হোক। নাগরিকরা চায় কম খরচে গণপরিবহণ চলুক। সেখানে যেন কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। অবিলম্বে মহানগর থেকে অবৈধ ইজিবাইক অপসারণে উদ্যেগ নেওয়া হোক। একই সঙ্গে বৈধ বাইকের নবায়নও দেওয়া হোক।