আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

২৫ মার্চ ১৯৭১। রাত ১১টা ১০ মিনিট। বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। অপারেশন সার্চলাইটের নামে মূলত সেদিন হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা। সেদিনের এই বর্বর বাহিনীকে যারা মদদ দিয়েছে তারা হচ্ছে দেশের মধ্যে থাকা কিছুসংখ্যক দুষ্ট মানুষ। পরবর্তী সময় যারা আলবদর, আলশামস, রাজার এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিতি পায়। ওই দুষ্ট চক্র বাংলাদেশের প্রগতি থামিয়ে দিতে সর্বদা কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশে এইসব কুলাঙ্গারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় স্বাধীন দেশেও তারা একই কৌশল অবলম্বন করে চলেছে।
বেশিরভাগ সময় সরকারের সঙ্গে থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফুলে ফেপে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। এবং যখনই সুযোগ পেয়েছ তখনই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রসার ঘটিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাদের জঘন্য থাবা বিস্তার করেই চলেছে। ২৫ মার্চের প্রগতি বিরোধী সেই চক্রকে চিহ্নিত করুন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে এর কুফল একদিন গোটা জাতিকে বহন করতে হবে।
সাম্প্রদায়িক এই মৌবাদী গোষ্ঠী সময় বুঝে রূপ পরিবর্তন করে জঘন্য এইসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সরকার দায়িত্ব পালনকালে হেফাজত ইসলামের নামে দেশের মধ্যে ধর্মীয় সহিংসতা চালিয়ে আসছে। হেফজতের নামধারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার ঐদ্ধত্য দেখিয়েছে। তারাই লালন ভাস্কয় ভেঙেছে। সরিয়ে ফেলেছে হাইকোর্টের সামনে ভাস্কর্যও। এদের কারণে বাংলাদেশের পাঠ্য বইয়ে পরিবর্তন করেছে সরকার। পাঠ্য বই থেকে অনেক গল্প, উপন্যাশ, কবিতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই কজে সরকারের সহযোগিতা পেয়েই দিন দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এই চক্র মূলত ১৯৭১ এর আলামত।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের দোসররা পরাজিত হলেও তারা নিশ্চিহ্ন হয়নি। তারা ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছিল পরবর্তী থাবা বিস্তারের। সংগঠিত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই থাবা বসায়। সেই এক থাবায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ২১ বছর পেছনে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় তারা। এই সময়ের মধ্যে কাটাছেড়া হয় স্বাধীন দেশের সংবিধান। ৭২-এর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার শব্দ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। বাদ যায় সংবিধানের মূল চার নীতি। এরপর একের পর এক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে চলে। যার ধারাবাহিতকতায় বাংলাদেশকে তারা কখনো কক্সবাজারের রামু, কখনো ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাছির নগর, কখনো সুনামগঞ্জের শাল্লায় স্বরূপে আর্বিভূত হচ্ছে। এই চক্র বিভিন্ন সময় জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে দেশকে পেছনে নিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বধীনতার সুবর্ণ জযন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আবারো মাথাচারা দিয়ে উটেছে। সবশেষ সুনামগঞ্জের শাল্লায় জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছে। যে ঘটনাগুলো আমাদের ১৯৭১ সালেরর বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ সাম্প্রদায়ীকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের নামে যে মানুষ হত্যা হয়েছিল, আজকের বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তির উত্থান সেই পথ নির্দেশ করছে। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা অন্য ধর্মের মানুষদের ওপর নির্যাতন, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা কখনই মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশকে ধারণ ও লালন করে না। এরা ধর্মান্ধ। এদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে এরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।