আটঘর ডিঙি নৌকার হাট

প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল আটঘরে ভেসে আছে ‘আটঘর ডিঙি নৌকার হাট’। নিম্ন অঞ্চল আটঘর কুড়িয়ানা। এখানকার মানুষের সারা বছর ভেসে বেড়াতে হয় নৌকায় চড়ে। তবে বর্ষা মৌসুমেই বাড়ে এই ডিঙি নৌকার বেচা-কেনার চাহিদা। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার আটঘর খালের কয়েক কিলোমিটার স্থান জুড়ে বসে ডিঙি নৌকার হাট। সকাল ৬টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে ডিঙি নৌকার হাট।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আটঘর বাজার। আটঘর বাজার পেরিয়ে ২মিনিট কুড়িয়ানার পথে হাটলেই চোখে পরবে ‘আটঘর ডিঙি নৌকার হাট’। এই আটঘরে প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রবাণ এবং ভাদ্র এই ৪ মাস দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ ডিঙি নৌকার হাট বসে।
‘আটঘর ডিঙি নৌকার হাট’ জমজমাট থাকলেও এবছর করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রকোপে থেমে আছে। নৌকার কারিগর চাহিদা মত দাম না পাওয়ায় তাদের জীবন-জীবীকা এখন থেমে আছে। অন্যদিকে ক্রেতার আয়-বাণিজ্য কম হওয়ায় চাহিদা থাকলেও সামার্থের মধ্যে নেই ডিঙি নৌকার দাম।
নৌকা বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, বছরের চার মাস নৌকার বিক্রির টাকা দিয়ে চলে পুরো বছর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বেচা-বিক্রি নেই। নৌকার মাথায় চরাডিতে বসেই দিন পার হয়ে যায় নৌকা বিক্রেতার। তাদের জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তায়, সংসারে লেগে আছে টানা পোড়েন। বাজারে প্রতিটি নৌকার দাম আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। এক-দেড় বছর টেকসই থাকে এসব নৌকা। এই আটঘর কুড়িয়ানা ডিঙি নৌকার হাটে ঝালকাঠি-পিরোজপুর ছাড়াও বরিশাল ও মাদারীপুর-ফরিদপুরের লোকজন নৌকা কিনতে আসে।
ঝালকাঠি ও পিরোজপুর এই দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার এই নৌকাশিল্পের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। কৃষি কাজ, মাছ ধরা, মাছের ঘেরের কাজসহ বিল অঞ্চলে ভাসমান হাট-বাজারে বেচাকেনা, যাতায়াতসহ অন্যান্য সকল কাজে একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা।