আমতলীতে ঝুঁকি নিয়ে ৭ সেতুতে ৫০ হাজার মানুষের চলাচল

আমতলীতে ঝুঁকি নিয়ে ৭ সেতুতে ৫০ হাজার মানুষের চলাচল

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় আমতলী উপজেলার ১৯ গ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী ৭টি লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ন। এর মধ্যে অসংখ্য সেতুর মাঝ খানের ঢালাই ধ্বসে গর্ত হয়ে রড় বেড়িয়ে গেছে। ৩টি সেতু আকস্মিক দেবে গেছে। এছাড়া জরাজীর্ণ ৭টি সেতু দিয়ে ১৮ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে তাদের ভোগান্তি আর বিরম্বনার শেষ নেই।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের মুছুল্লি বাড়ী সংলগ্ন লোহার সেতু, চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের লোহার সেতু ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের কালামপুর দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন লোহার সেতুটি দেবে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরেছে ৬টি গ্রামের। 

গত ৫ বছর ধরে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন ৯০ মিটার লোহার সেতু, জেবি সেনেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ৯০ মিটার লোহার সেতু, কুকুয়া কুতুবপুর আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন ৫০ মিটার লোহার সেতু, আমড়াগাছিয়া বাজার সংলগ্ন ৯০ মিটার লোহার সেতু ও মহিষডাঙ্গা ম্যালকার বাড়ী সংলগ্ন ১৪০ মিটার লোহার সেতুটি  মাঝ বরাবর ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ওই ভেঙ্গে যাওয়া লোহার সেতুগুলো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে। এতে প্রায় ১০ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।  

কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী এবং কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের শামিম ম্যালাকার দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন লোহার সেতুটি গত মে মাসের মাঝামাঝি আকস্মিক ভাবে মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে যায়। সেতুটি আমতলী সদর ইউনিয়ন এবং চাওড়া ইউনিয়নের সেতুবন্ধন হলেও বর্তমানে এই সেতু ভেঙ্গে পড়ে থাকায় অনেক পথ ঘুরে বিকল্প হিসেবে তাদের চলাচল করতে হয়। ওই সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা এবং আমতলী ইউনিয়নের মজিহষডাঙ্গা এবং পূর্ব মহিষডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। 

২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালে মুছুল্লি বাড়ীর সংলগ্ন স্থানে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে লোহার সেতুটি নির্মাণ করে। ওই সময় ঠিকাদার নি¤œমানের কাজ করায় দুই বছরের মাথায় সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে সেতুটির মাঝখানের ৪টি পিলারসহ সেতুটি দেবে পানির সঙ্গে মিশে যায়। গত ৯ বছর ধরে দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ৮ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করেছে। এতে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরে ওই ইউনিয়নের গাজীপুর, গেরাবুনিয়া, সোনাখালী, দরিটানা, পশ্চিম সোনাখালী ও আমতলাসহ ৮ টি গ্রামের। যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে ওই গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মনিরুল ইসলাম মুছুল্লী জানান, সেতুটি দেবে যাওয়ায় ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

অপরদিকে ২০১১ সালে চাওড়া খালের হলদিয়া হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও চন্দ্রা গ্রামের মাঝখানে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি লোহার সেতু নির্মাণ করে। এই সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন হলদিয়া, গুরুদল, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার লোক বিভিন্ন কাজে আমতলী উপজেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আসা যাওয়া করে। চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের লোকজনও একই সেতু পার হয়ে বিভিন্ন কাজে হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়ত করে। তাছাড়া চন্দ্রা গ্রামের অর্ধশতাধিক শিশু রয়েছে হলদিয়া হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরাশুনা করে। সেতুটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে সেতুটির মাঝ বরাবর দুই জায়গায় ১০ থেকে ১২ ফুট ধরে ঢালাই ধ্বসে পড়ে গর্ত হয়ে রড বেড়িয়ে গেছে। এতে মানুষ কোন রকম পারাপার করতে পারলেও যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেতুটি বর্তমানে এতই নড়বরে যে সেতুর উপর কোন যানবাহন ও মানুষজন উঠলে কাঁপতে থাকে। তাই সেতুটি যে কোন সময় ধ্বসে হলদিয়া, চাওড়া এবং আমতলীর সাথে সড়ক যোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। 

স্থাণীয় বাহাদুর মোল্লা জানান, ‘সেতুর মাঝখান দিয়া সিমেন্টের ঢালাই পড়ে রড বেড়িয়ে যাওয়ায় এখন আর যানবাহন চলাচল করতে পারেনা। তিনি আরো বলেন, আগে ধান, চাউল ডাইল বিক্রির জন্য গাড়িতে এবং টমটমে করে আমতলী বাজারে নিয়া যাইতাম। এ্যাহন এই সেতু েেভঙ্গে যাওয়ায় বহু কষ্ট কইর‌্যা মোগো ধান চাউল বাজারে নিতে হয়। এতে মোগো খরচও অনেক বাইর‌্যা গ্যাছে।’ 

হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ন থাকায় কোন যানবাহন না চলায় গর্ববতী মা কিংবা মুমুর্ষ বয়স্ক রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় মহা বিপাকে। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া দুরহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের বাড়িতে বসেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। নিরূপায় হয়ে তখন গ্রাম্য কবিরাজ কিংবা হাতুরে ডাক্তারে শরনাপন্ন হতে হয়।

চাওড়া খালের রাঢ়ী বাড়ির সামনে এবং পূর্ব চন্দ্রা গ্রামের মাঝখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ একই সময়ে আরেকটি লোহার সেতু নির্মান করে। ওই সেতুটিও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির মাঝ বরাবর গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ঢালাই ধ্বসে বড় কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেতু মেরামত করলেও পুনঃরায় আবার ধ্বসে পড়ে। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন উত্তর তক্তাবুনিয়া, পূর্বচন্দ্রা, লক্ষী গ্রামের কয়েক হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সেতুটি নরবরে হওয়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি পড়েছে ওই গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। 

উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের রামেশ্বর জানান, ‘সেতুটা ভাইগ্যা যাওয়ায় মোগো এ্যাহন অনেক কষ্ঠ কইর‌্যা চলাচল করতে হয়।

চাওড়া লোদা খালের মাদানী নগর হাফেজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন সেতুটিরও অবস্থা বেহাল দশা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মাদরাসা সংলগ্ন সেতুটির উপর দিয়ে মালবোঝাই একটি টমটম পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝ বরাবর সিমেন্টের ঢালাই ধ্বসে পরে বিশাল আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে মেরামতের অভাবে ওই সেতু দিয়ে মানুষ কোন রকম চলাচল করলেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

একই খালে লোদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন লোহার সেতুটির রেলিং খসে পড়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় সিমেন্টের ঢালাই ধ্বসে যাওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে রড বেড়িয়ে যান চলাচলসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেতু পারাপার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ওই গ্রামের বসিন্দা আবুল কালাম মিস্ত্রী ও শিক্ষক মোঃ শাহজাহান মিয়া জানান, সেতু দুটিতে সিমেন্টের ঢালাই ধ্বসে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় আমরা অনেক ভোগান্তিতে আছি। আমরা এখন এক পার থেকে আরেক পারে যেতে পারি না। এ অবস্থায় সেতু দুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেওয়া এখন প্রায় ব্যাবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সেতু দুটি এতই নরবরে যে কোন সময় পুরো সেতু ধ্বসে পড়তে পারে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ের মধ্যে দিয়ে সেতু পার হয়।

এছাড়া আঠারোগাছিয়ার চাউলা বাজার সংলগ্ন, হলদিয়ার কাঠালিয়া বাজার সংলগ্ন, গুলিশাখালীর আঙ্গুলকাটা লঞ্চঘাট সংলগ্ন, কালিবাড়ী খালের উপড় ও আড়পাঙ্গাশিয়ার যুগিয়া খালের উপড় নির্মিত লোহার সেতুর মাঝে সিমেন্টের ঢালাই ধ্বসে পড়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে রড় বেড়িয়ে গেছে। আবার অনেক সেতুর স্লিাপার ভেঙ্গে খালে পড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি আর বিরম্বনার পড়েছে ওই সেতু পারাপার হয়ে চলাচলকারী মানুষজন।

আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৭টি লোহার সেতুর স্থলে গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। এজন্য বরাদ্দ চেয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।