আমতলীতে তরমুজ আবাদে ব্যস্ত চাষীরা

আমতলীতে তরমুজ আবাদে ব্যস্ত চাষীরা

বরগুনার আমতলী উপজেলার গ্রামাঞ্চলে তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। এখন কেহ ঘরে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের নারী সদস্য ও শিশুদের নিয়ে কাজে নেমে পরেছেন তারা। তাদের যেন একটু ফুসরত নেই। গত বছর শীলা বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে শত-শত একর জমির তরমুজ নষ্ট হওয়ায় অনেক চাষীরা মোটা অংকের লোকসান পড়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে এ বছর সেই চাষীদের অধিকাংশ তরমুজ চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, গত বছর তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৫০০ হেক্টর। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ কম হচ্ছে। বলে-দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ উপজেলায় রসালো তরমুজ চাষ ভালো হয়। মাঘ মাসের শুরুতে চাষীরা তরমুজ চাষ শুরু করে কিন্তু ওই সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে চাষীরা তরমুজ চাষ করতে পারেনি। মৌসুম পিছিয়ে পরা, বিগত ৩ বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ্য হওয়ায় ও আবারো লোকসানের ভয়ে এ বছর অধিকাংশ চাষীরা তরমুজ চাষ করছেন না। এ কারনে চাষীরা তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে জানান অনেক তরমুজ চাষী। 
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, হলদিয়া, চাওড়া ও সদর ইউনিয়নে তরমুজের ফলন ভালো হয়। চাষীরা ইতোমধ্যে জমি চাষাবাদ করে বীজ বপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে বীজের দামও কম। বাজারে এক কৌটা (১০০ গ্রাম) বিঘ ফ্যামিলি ২৪০০ টাকা, জাগুয়া ২১০০ টাকা ও এশিয়ান তরমুজ বীজ ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 


সরেজমিনে উপজেলার সোনাখালী, গাজীপুর, পাতাকাটা, চন্দ্রা, উত্তর-দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়াহাট ও কৃষ্ণনগর গ্রামগুলো ঘুরে দেখাগেছে, কৃষকরা মাঠে কাজ করছে। মাঠের পর মাঠ চাষাবাদ করে তরমুজ বীজ বপনের জন্য গর্ত তৈরি করছে। এ কাজ করতে পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের নারী ও শিশুরাও মাঠে কাজ করছে। 
সোনাখালী গ্রামের জাকির শিকদার বলেন, আমি এ বছর ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। বীজের দাম কম থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজ চাষে খরচও কম হবে। তিনি আরও জানান, গত বছর এক কৌটা বিঘা ফ্যামিলি বীজ ক্রয় করেছি সারে চার হাজার টাকায় এ বছর ঐ পরিমাণ বীজ কিনেছি দুই হাজার তিন শত টাকায়।


উত্তর গাজীপুর গ্রামের তরমুজ চাষী শহিদ চৌকিদার জানান, বিগত তিনটি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে এ এলাকার তরমুজ চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর্থিকভাবে তাদের লোকসান হওয়ায় এ বছর অনেক চাষী তরমুজ চাষ করছেন না।
কুকুয়া গ্রামের কালাম হাওলাদার বলেন, গত তিন বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এ বছরও ছয় একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। তবে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ চাষীরা এ বছর তরমুজ চাষ করছেন না।


উত্তর সোনাখালী গ্রামের মাইনুদ্দিন প্যাদা বলেন, তিনি এ বছর ছয় একর জমিতে তরমুজ চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে বীজ রোপন করেন। গত পৌষ মাসে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার কারনে তার রোপনকৃত বীজ নষ্ঠ হয়ে যায়। তিনি আবার মাঘ মাসের প্রথম দিকে নতুন করে বীজ বপন করেন। তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক দূযোর্গের ভয়ে এ এলাকার অনেক চাষী এ বছর তরমুজ চাষ করা থেকে বিরত রয়েছেন।


আমতলী উপজেলার কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে গত বছর তরমুজ চাষীদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারনে কৃষকরা তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজ চাষীর সংখ্যা কমে গেছে।