আর নেই শিক্ষাবিদ বি করিম

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরকারি বিএল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. বজলুল করিম (বি. করিম) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকাল ৭ টায় খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা ২নম্বর ক্রস রোডের বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গুণী এ শিক্ষাবিদ এ অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও বি. করিম স্যার নামেই সর্বাধিক পরিচিত। খুলনার ইতিহাস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রজলাল কলেজের (বিএল) ইতিহাসসহ বহু গ্রন্থের রচয়িতা ও সম্পাদনার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাদামাটা জীবন-যাপন করেছেন এ খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। সহধার্মিনী লায়লা আরজুমান্দর অনুপ্রেরণায় নগরীর দৌলতপুরের পাবলা ২নম্বর ক্রস রোডের বাসভবনে অবিরত লিখে গেছেন নানান বিষয়ে। বড় ছেলে রানা এজাজ করিম প্রবাসী এবং ছোট ছেলে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক রুমি রিজভী করিম ও একমাত্র মেয়ে সংগীত শিল্পী সুষমা স্নিগ্ধা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
অধ্যাপক মো. বজলুল করিম ১৯৩৮ সালের ১১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর মহকুমার করিমপুর থানা চেচানিয়া দেওয়ানের পাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্ম নেন। বাবা রফিক উদ্দিন আহমেদ ছিলেন রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা এবং মা বিধুজান বেগম (নকশিকাঁথা শিল্পী) গৃহিণী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) এবং এমএ (দর্শন) ডিগ্রি লাভ করেন। কয়েকটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনার পর ১৯৬২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকারি বিএল কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। অধ্যাপনার সুবাদে সাবেক ইউওটিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সামরিক বিভাগে শুধু কমিশনপ্রাপ্ত হননি; সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে ক্রমান্বয়ে বিএনসিসির মেয়র পদ মর্যাদা লাভ করেন। অবসর নিয়েই বসে থাকেননি তিনি-১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত খুলনা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বি করিম স্যারের রচিত বইয়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল- আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞানের রূপরেখা (অনার্স শ্রেণির জন্য), অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ (অনার্স শ্রেণির জন্য), উচ্চ মাধ্যমিক সহজ যুক্তিবিদ্যা, অবরোহ ও আরোহ খন্ড, হেগেলোত্তর দর্শন (অনার্স এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির জন্য), অনার্স শ্রেণির জন্য উচ্চতর যুক্তিবিজ্ঞানের ভূমিকা (প্রতীকী), ব্রজলাল (বিএল) কলেজের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে খুলনার দৌলতপুর, শিক্ষা ও প্রশাসনে মন্দির-মসজিদের ভূমিকা, পাশ্চাত্য দর্শণের ইতিহাস-সমকালীন (সহযোগী লেখক), কালা মিয়া’র ঘাট ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব (সহযোগী লেখক), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বিবর্তণের ধারায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরকে যেমন দেখেছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রকৌশলী এসএম শহীদুল্লাহ : জীবন ও কর্ম, বিএল কলেজের অর্ধশতাব্দী (১৯০২-১৯৫২), মতাত্মা মন্নুজান ও মহষি মহসীন-এর অবদান ও গুণাবলী, সাদমান সিদ্দীকি তেনজিৎ-এর জীবনাল্লেখ্য, পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মে ও বিকাশ ও অলিম্পিক ও ফুটবলের সন্ধানে এবং শৈল্পিক ফুটবলে ‘রুমী-রা’।