ইউক্রেনজুড়ে উল্লাস

ইউক্রেনজুড়ে উল্লাস

ইউক্রেনের খেরসন শহর থেকে রাশিয়া তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার পর সেখানকার মানুষ ইউক্রেনীয় সৈন্যদের উল্লাস করে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনজুড়ে বিজয়োল্লাস করেছেন দেশটির জনগণ।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খেরসন শহরের মানুষ ইউক্রেনের পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। ইউক্রেনীয় সেনাদল শহরে ঢোকার পর স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানান তারা। বড় আগুনের কুণ্ডলীর চারপাশে জড়ো হয়ে লোকজনকে সারারাত ধরে দেশাত্মবোধক গান গাইতেও দেখা যায়।

গত ফেব্রুয়ারিকে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর খেরসন ছিল একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী যেটি রুশরা দখল করতে পেরেছিল। সেখান থেকে রুশ সৈন্যদের পিছু হটাকে এই যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মস্কো জানিয়েছে, খেরসন থেকে তারা ৩০ হাজার সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সেই সাথে সেখান থেকে প্রায় ৫ হাজার সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্র-শস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিসও তারা সরিয়ে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার এই পশ্চাদপসরণকে এক ‘অসাধারণ বিজয়’ বলে বর্ণনা করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এটিকে তার দেশের জন্য এক ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে বর্ণনা করেন।

তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। কম্বোডিয়ায় আসিয়ান দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে দিমিত্রি কুলেবা বলেন, “আমরা যুদ্ধের ময়দানে জয়লাভ করছি। কিন্তু যুদ্ধ চলবে।”

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবরে বলা হচ্ছিল, ইউক্রেনের সৈন্যরা নিপ্রো নদীর একেবারে পশ্চিম তীর পর্যন্ত চলে এসেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই নদী পার হওয়ার প্রধান একটি সেতু, আন্তোনিভস্কি সেতু আংশিক ধসে গেছে। কিভাবে এই সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা পরিষ্কার নয়।

যে রুশ সৈন্যরা খেরসন দখল করে নিয়েছিল, তারা এখন নদীর পূর্ব দিকে চলে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। খেরসনের একজন বাসিন্দা রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর সেখানকার পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সেখানে লোকজন রাস্তায় নেমে আবেগে গান গাইছে, নাচছে।

আলেক্সি সানদাকভ বিবিসিকে বলেন, “খেরসন এখন মুক্ত। সবকিছু এখন বদলে গেছে। সবাই আজ সকাল থেকে কাঁদছে।” তিনি জানান, শহরে আসা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সবাই আলিঙ্গন করতে চাইছে।

রাশিয়ার অধিকৃত এলাকাগুলোতে যে গণভোটের আয়োজন করা হয়, তারপর হতে ক্রেমলিন খেরসনকে নিজেদের দেশের অংশ বলে দাবি করছিল।

রাশিয়া খেরসন হতে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল গত বুধবার। তারা বলেছিল, এই শহরে আর রসদ সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার সেখানে রুশ সৈন্যদের সেরকম পিছু হটার দৃশ্য চোখে পড়েনি। কিন্তু শুক্রবার ঘটনা ঘটতে থাকে বেশ দ্রুত।

খেরসনের ফ্রিডম স্কোয়ারে ইউক্রেনের পতাকা দুলিয়ে ভিড় করে বহু বেসামরিক মানুষ। তারা ইউক্রেনের সেনাদের স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছিল।

এদিকে রাশিয়ায় অবশ্য খেরসন থেকে পিছু হটে আসার এই ঘটনার গুরুত্বকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে ক্রেমলিন। তারা সেখান থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহারের ঘটনাকে ‘নতুন করে মোতায়েন’ বলে বর্ণনা করছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা