উড়িষ্যার পথে ইয়াস

উড়িষ্যার পথে ইয়াস

ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অভিমুখে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এটি মঙ্গলবার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং তার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

সোমবার রাতে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতিপথ পরিবর্তন না করলে ইয়াসের বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা কম। তবে আঘাত না হানলেও উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস ও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের চারটি সমুদ্র বন্দরে দুই নম্বর সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।

এর আগে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সোমবার সকাল ছয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এ পরিণত হয়।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সন্ধ্যার দিকে ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগোচ্ছিল। সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে অবস্থান করছিল।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস রাত নয়টার দিকে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার সকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসার শঙ্কা কম। তবে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস অনেক বড় হওয়ায় খুলনা অঞ্চলের দিকে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হবে। পূর্ণিমার সময় হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমের সময় জোয়ার থাকবে। তাই জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়ে ১-২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ভারতের বালাশুরে জলোচ্ছ্বাসের পানি চার মিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে সে দেশের আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ইয়াস ধীরে ধীরে প্রবল এবং পরবর্তীতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানান রুহুল কুদ্দুস। গত বছর আঘাত হানা আম্পানের সঙ্গে ইয়াসের তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আম্পান সুপার সাইক্লোন হিসেবে ইয়াসের চেয়ে শক্তিশালী থাকলেও সেটি প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে গিয়ে দুর্বল হয়ে উপকূলে আঘাত হেনেছে। কিন্তু ইয়াস মাত্র ৬০০-৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে। ফলে এটি উপকূলে আঘাত হানার সময় আম্পানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকতে পারে।

সোমবার সন্ধ্যায় অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক ৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি এদিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং বুধবার ভোর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা উপকূলের নিকট উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।