কৈশোর প্রজননস্বাস্থ্য সেবার বাধা দূর করতে হবে

কৈশোর প্রজননস্বাস্থ্য সেবার বাধা দূর করতে হবে


একটি ছোট্ট শব্দ ‘অধিকার’। শব্দ ছোট হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে একজন নাগরিক হিসেবে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা এবং বেঁচে থাকার অনেকগুলো সুচক আছে। এই সুচকের অন্যতম হচ্ছে অধিকার। মানুষ হিসেবে এই অধিকার সবার জন্যই একরকম হবার কথা। কিন্তু নানামূখি বৈষম্যের কারণে সবার জন্য সমান অধিকার পাবার সুযোগ সৃষ্টি হয় না। এখানে ক্ষমতা, শ্রেণি বিভেদ, ধর্ম, পুরুষ এবং নারী বিচারে অধিকার প্রাপ্তি ঘটে। যার ক্ষমতা বেশি তার অধিকারও বেশি। এই ধারা চলমান। এটা পরিবর্তন হচ্ছে না। যদিও পরিবর্তনের ¯্রােত বইতে শুরু করেছে। তবে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন না হলে সঠিকভাবে অধিকার প্রাপ্তি ঘটবে কি না তা সন্দেহ।

এমন বাস্তবতায় নারী পক্ষের উদ্যোগে বরিশারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘অধিকার এখানে এখনই’ প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। মতবিনিময় সভায় উঠে আসে নারী পুরুষের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য। নারী ও শিশুদের বিশেষ করে তরুনদের যৌন প্রজননস্বাস্থ্য সেবার বাধাসমূহ এবং এসব বধা অতিক্রম করে আগামীর সম্ভাবনাময় তরুনদের মানবসম্পদে পরিনত করার প্রত্যয়। 

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর আভাস সম্মেলন কক্ষে ‘অধিকার এখানে, এখনই’ প্রকল্পের আওতায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সহযোগিতা করেছে বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থা ও তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্ম।
মতবিনিময় সভায় প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন অধিকার এখানে, এখনই (আরএইচআরএন-২) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরণ, বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থার পরিচালক কাওসার পারভীন, অধিকার এখানে, এখনই প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মৌসুমী বেগম, শিক্ষানবীশ দ্বিপী আক্তারসহ বরিশালের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

মতবিনিময় সভায় নারীপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার মানুষের পক্ষে কাজ করছে নারীপক্ষ। যেখানে যখনই নারীর অধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে, সেখানেই ছুটে গেছেন নারীপক্ষের সদস্যরা। এ সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার, সহিংসতা রোধ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।

দেশের সকল বিভাগীয় শহর সহ বেশ কিছু জেলায় কাজ করছে নারী পক্ষ। নারী পক্ষের সঙ্গে ৭টা প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর স্বাস্থ্য ও কৈশোর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে অধিকার এখানে, এখনই (আরএইচআরএন-২) ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্প শুরু করেছে। দেশের ৫টি বিভাগের ৯টা জেলার ২৮টি উপজেলায় কাজ চলবে। এর মধ্যে বরিশালের ৫ জেলার ১৫টি উপজেলা এবং খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহর সহ ১৩টা উপজেলা। প্রতিটি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ছোট ছোট উদ্যোগ নিলে একদিন সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সেজন্য নারীপক্ষের শ্লোগান- রাষ্ট্র হবে ইহ জাগতিক, সমাজ হবে ধর্ম নিরপেক্ষ, মানুষ হবে অসাম্প্রদায়িক এটা অত্যন্ত প্রসিঙ্গিক। একই সঙ্গে বর্তমান প্রকল্প ‘ অধিকার এখানে, এখনই’ একটি যুগান্তকারী শিরোনাম। এর মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা কিছুটা হলেও তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার ফিরে পাবে। সেজন্য পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে দৃষ্টিভঙ্গী। সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া, নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ করা, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং নারীর অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ সত্যিকার সোনার বাংলায় রূপ নেবে। 
প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন বলেন, সারা পৃথিবী নারীদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্র। বর্তমানে এই অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও কৈশর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার তেমন উন্নতি ঘটেনি। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় শতভাগ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। আমরা চাই একজন নারী বা কিশোর-কিশোরী তাদের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করুক। এজন্য দরকার গণজাগরণ। নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গণজাগরণ তৈরি করে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই সব জায়গায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।