প্রতিরোধ যুদ্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমারে ভয়াবহ সংঘর্ষ

প্রতিরোধ যুদ্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমারে ভয়াবহ সংঘর্ষ

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গণতন্ত্রপন্থী মিলিশিয়াদের লড়াইয়ে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং মিয়ানমারের গণমাধ্যমের মতে, সামরিক সরকারের বিরোধীরা গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘জন-প্রতিরক্ষা যুদ্ধ’ ঘোষণা করার পর থেকে সামরিক সরকারের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় শুক্রবার এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর: আল জাজিরা।

সামরিক সরকারের বিরোধীরা শনিবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, কোনও ‘অর্থবহ বিদেশি হস্তক্ষেপ’ এর অভাবে তারা সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরপরই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটলো।

মিয়ানমারের আইন অমান্য আন্দোলন শনিবার ভোরে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মিয়ানমারের তরুণদের কাছে তাদের যা আছে তা নিয়েই লড়াই করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই’। বিবৃতিতে তারা জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকারের (NUG) সঙ্গে ‘সরাসরি সম্পৃক্ত’ হয়।

বিশেষ দূত হিসেবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে তা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে তারা এই আহবান জানালো। মিয়ানমারের বিভিন্ন সরকারবিরোধী শক্তিগুলোও চলতি সপ্তাহের শেষে জাতীয় ঐক্যের সরকারকে (এনইউজি) মিয়ানমারের বৈধ সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দিতে একটি প্রচারণা অভিযান শুরু করবে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল প্রতিরোধের জন্য গঠিত এনইউজি এর আগে মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বানও জানিয়েছিল। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সমন্বয় করা এবং সৈন্য ও সরকারি কর্মকর্তাদেরকে পক্ষ বদল করতে রাজি করানোর চেষ্টাও করেছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এনএলডি সরকারের আত্মগোপনে যাওয়া মন্ত্রী-এমপিরা এই এনইউজি সরকার গঠন করে।

অং সান সু চির সরকারকে উৎখাতের পর থেকেই মিয়ানমার অস্থির হয়ে আছে। অংসান সুচির ক্ষমতাচ্যুতির মধ্যে দিয়ে এক দশকের অস্থায়ী গণতন্ত্রের অবসান ঘটেছিল। এরপর দেশব্যাপী ক্ষোভ, ধর্মঘট এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়। সামরিক সরকারবিরোধীরা একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের মতে, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১০৫৮ জন ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছে। বর্তমানে ৬৩০০ জনেরও বেশি জেলে আটক রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন এবং সাগাইং অঞ্চল সহ সারা দেশে শনিবার সকালে আরও গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

মিডিয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শুক্রবার সেনাবাহিনী এবং জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে মিয়ান থার গ্রামে যুদ্ধ হয়। এতে সামরিক সরকারের সৈন্যরা ভারী কামান ব্যবহার করায় সরকার বিরোধী মিলিশিয়া এবং গ্রামবাসীরা হতাহত হয়।

ওই গ্রামের ৪২ বছর বয়সী একজন বাসিন্দা বলেন, ‘তারা গোলাবারুদ ছুঁড়েছিল, তারা আমাদের গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে’।  তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু এবং তার ১৭ বছর বয়সী ছেলেও রয়েছে। তার ছেলে সরকারবিরোধি মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য ছিল।

‘সব হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব.. আমি কেয়ামত পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করবো না’।

বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে তিনজন সৈন্য হত্যার খবরও পাওয়া গেছে।

ভারতের সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যের থান্টল্যাংয়ে বৃহস্পতিবার থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে।

রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং মিজিমা নিউজ সার্ভিস জানিয়েছে, সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক জান্তা।