কোভিড কালীন বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপদ প্রসব

বাংলাদেশে করোনার সঙ্গে লড়াই করার পর বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে নিরাপদ প্রসব। করোনার ঝুঁকির কারণে গর্ভবতী মায়েরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হতে না পারায় এই সমস্যা তীব্র হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এবং মেয়ে শিশুর সনিরাপত্তার অজহাতে বাড়ছে বাল্য বিবাহ। প্রয়োজন মতো পরিবার পরিকল্পনা সেবা সমগ্র্রি প্রাপ্তি, এএনসি-পিএনসি সেবা না পাওয়ায় এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে পরতে হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের অনলাইন বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। করোনার কারণে ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় গত ১৫ মে ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে আর্ন্তজাতিক পরিবার দিবস।
জাতিসংঘের ৫৯তম অধিবেশনে ‘সামাজিক ভাবে টেকসই উন্নয়নের জন্য সামাজিক বিকাশ এবং সকলের কল্যাণে প্রযুক্তির ভূমিকা’ বিষয়টিকে মাথায় রেখে এবারের বিশ্ব পরিবার দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এবারের পরিবার দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পরিবার এবং নতুন প্রযুক্তি’। বর্তমান কভিডকালীন সময়কে মাথায় রেখে পরিবারগুলোর প্রয়োজন এবং সামর্থ বিবেচনা করে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়। তবে এই প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রযুক্তি ব্যবহার হলেও তা সব পরিবারকে এখনও ছুঁয়ে যেতে পারেনি। সেখানেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ।
ইউনিসেফের মতে কারোনাকাীন সময় পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যহত হওয়ায় জন্ম হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা করোনার সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হয়। তাদের ওদওয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০৪ জন অতিরিক্ত শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে ৯ হাজার ২৩৬ জন। আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে করোনাকালে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যহত হবার কারণে এ বছরে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার অতিরিক্ত শিশু জন্ম নেবার সম্ভবনা রয়েছে। ইউনিসেফের দেওয়া ওই তথ্যে বাংলাদেশ আর এক ঝুঁকির মধ্যে পরতে যাচ্ছে। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে বিকল্প পন্থায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে ডিজিটার প্রযুক্ত ব্যবহার করে তথ্য এবং পরিবারপরিকল্পনা সামগ্রি হাতের নাগালে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমআইএস রিপোর্টে দেখা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা কমে গেছে। এর মূল কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে কাছাকাছি এসব সেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। করোনাকালীন সময় পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কমে গেছে। কারণ করোনাকালীন সময়ে লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকা, সেবা কর্মীরা বাইরে রেরুতে না পারার কারণে পদ্ধতি ব্যবহার কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউএনউইমেন কভিডকালীন সময়ে তাদের র্যাপিড জেন্ডার আ্যনালিসিস রিপোর্টে বলেছে, এই কভিডকালীন সময়ে ৫১ দশমিক ৭ ভাগ নারী স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতার কথা বলেছে।
এই সকল পারিবারিক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব বিষয় উল্লেখ করে সাবেক পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদাভাবে ভাবতে হবে। যেকোনভাবেই হোক সেবা পৌঁছাতে হবে। সেটা অনলাইন বা সরাসরি যে কোন মাধ্য ব্যবহার করে হোক। সেজন্য সেবা প্রদানকারীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, করোনাকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী খাতেও বাজেট দিতে হবে। বিহেবিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের বিভিন্ন সফলতাগুলোকে নিয়ে অন্যান্য জায়গায় কাজ করতে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। এসডিজি অর্জনে এই খাতে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মনিটরিং জোরদারের মাধ্যমে এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মেরী স্টোপস্ বাংলাদেশ-এর অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মনজুন নাহার বলেন, আগামীতে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদানের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও এই খাতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। একই সঙ্গে সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এএফপি-মিডিয়া এ্যডভোকেসী প্রোগ্রাম টিম লিডার পুলক রাহা বলেন, করোনাকালে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ এবং শিশু জন্মের হারকে একটি সতর্কতা সংকেত হিসেবে নিয়ে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তৃণমূল পর্যায়ের এবং প্রান্তিক মানুষ যাতে পরিবারপরিকল্পনা সেবা নিয়মিত পেতে পারে তার জন্য অনলাইনে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উপকরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালে কমিউনিটিতে পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এই সেবাকে ডিজিটালাইজেশন করার কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একটি সুখি সমৃদ্ধিশীল পরিবার তৈরি সরকারের যে অঙ্গিকার সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই পরিবারের সেবা অর্থাৎ পরিবারের নারী ও শিশু সেবাকে নিশ্চিত করা একান্ত জরুরী। আর বর্তমান এই করনাকালীন সময়ে এই সেবা পৌঁছে দেবার একমাত্র উপায় হলো সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা সেবাকে ডিজিটালাইজ করা এবং প্রত্যন্ত মানুষের কাছে সহজে এবং কার্যকর ভাবে এই সেবা পৌঁছে দেবার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমে যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত হবে।
মোটকথা করোনাকালে পরিবার বিশেষ করে প্রসূতি মা, নারী শিশুরেদ দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি হাতের নাগালে রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে। সেজন্যই এই খাতে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।