খালেদার মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘পরিবারের আবেদন’

হাইকোর্ট দ্বিতীয় দফায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর এবার তার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করেননি।
পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। মহাসচিবের সঙ্গে আলাপ করে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়ে থাকতে পারে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।
এ বিষয়ে রবিবার সন্ধ্যায় জিয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সাময়িক মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার বিষয়টি স্বীকার করেননি। আবেদনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে গাজীপুর জেলার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে-বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিষয়টি তার জানা নেই।’
খালেদার মুক্তির আবেদনে কী লেখা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি ঠিক বলতে পারব না। পরিবারের পক্ষ থেকে করা হলেও হতে পারে। আবেদনে কী আছে আমার জানা নেই।’
সরকারের পক্ষ থেকে যদি সুস্পষ্টভাবে প্যারোলের আশ্বাস দেওয়া হয় তাহলে বিএনপি বিষয়টি বিবেচনা করবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বহুবার বলেছি, এটা (প্যারোল) সম্পূর্ণভাবে তার (খালেদা জিয়া) ব্যক্তিগত ব্যাপার, ম্যাডামের ব্যক্তিগত ব্যাপার, তার পরিবারের ব্যাপার। সেই ক্ষেত্রে আমরা এখন কিছু বলছি না।’
পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনটি বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন কিনা- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা তো তার পরিবার জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেইনি।’
দুই মামলায় সাজা নিয়ে দুই বছর ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া গত প্রায় এক বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করে আসছে বিএনপি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
গত শনিবার হাসপাতালে খালেদাকে দেখে এসে বোন সেলিমা ইসলামের শঙ্কা প্রকাশের পরদিনই জানা গেল তার মুক্তির আবেদনের বিষয়টি।
খালেদা জিয়ার জামিন না হলেও দুই মামলায় আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমের জামিন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকে বলে আসছি যে, এই রাষ্ট্র বর্তমানে অকার্যকর রাষ্ট্র হয়ে গেছে, এটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যার ফলে রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানে এখন কোনো শৃঙ্খলা-জবাবদিহিতার জায়গায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই কারণে আজকে একজন কুখ্যাত আসামি, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং যার কাছে কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেছে, বেআইনিভাবে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে অথচ রাষ্ট্র জানে না। এতে প্রমাণিত হয়েছে এই রাষ্ট্র একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত হয়েছে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে দেশে একটা প্রাতিষ্ঠানিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে আছেন খালেদা জিয়া। এরপর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।