গৌরনদীতে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা গ্রেপ্তারের ভয়ে দুই গ্রাম পুরুষ শূন্য

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় মো. শাহআলম খান (৬০) নামে আরও একজন নিহত হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৩জন নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে দুই গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। এ ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় হামলার পর গুরতর আহতাবস্থায় মো. শাহআলম খানকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে ময়না তদন্ত শেষে তার শাহআলম খানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত মো. শাহআলম খান গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড় দুলালী গ্রামের বাসিন্দা। শাহআলম খাঞ্জাপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পদে পরাজিত মন্টু হাওলাদারের ভায়রা ভাই। তার ২ ছেলে এবং ২ মেয়ে রয়েছে। অরাজনৈতিক শাহআলম কৃষ এবং সাংসারিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এই হত্যাকান্ডের জন্য ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য ফিরোজ মৃধাকে দায়ী করেছেন শাহআলমের স্বজনরা। তারা এই হত্যাকান্ডের কঠোর বিচার দাবি করেন।
নিহতের ভাতিজা অপূর্ব খান জানান, পাশর্^বর্তী খাঞ্জাপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মন্টুর ভায়রা শাহআলমকে গত বুধবার সকালে হুমকী দেয় ফিরোজের সমর্থকরা। ওইদিন সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাঞ্জাপুরের বেইলী ব্রিজ এলাকায় আকস্মিক শাহআলমের উপর হামলা চালায় তারা। এ সময় তাদের কিল-ঘুষিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং রাত সাড়ে ৯টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাতে মারা যায় সে।
নিহতের ছোট ভাই মজিবর খান জানান, তার ভাই শাহআলম কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন তিনি। শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধের জের ধরে তার ভাইকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। তিনি তার ভাইকে হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা লিপি বেগম ও জেসমিন আক্তার জানান, ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনকেক কেন্দ্র ৩ দিনের ব্যবধানে ওই এলাকায় ৩জন নিহত হয়েছে। এ কারণে ওই এলাকায় আতংক এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে কমলাপুর এবং বড়দুলালী গ্রাম অনেকটা পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে।
এদিকে ৩ দিনের ব্যবধানে ৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ফের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি রোধে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা বলেন নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগম।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন জানান, শাহআলমে নির্বাচনের কারণে হত্যা করা হয়নি। ভ্যানে ওঠাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় সে নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ২১ জুন নির্বাচন চলাকালে খাঞ্জাপুরের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ককটেল হামলায় মৌজে আলী মৃধা (৫৫) এবং ওইদিন সন্ধ্যায় এক সদস্য প্রার্থীর বিজয় মিছিলে ককটেল হামলায় আবু বক্কর (২৭) নামে আরও এক ব্যক্তি নিহত হয়। মৌজে আলী মৃধা হত্যা মামলায় খাঞ্জাপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য প্রার্থী ফিরোজ মৃধাসহ ৩জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। কিন্তু আবু বক্কর এবং শাহআলম হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি।