গ্রামীণ ও রবির লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ বিটিআরসির

প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আদায় করতে না পেরে দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি অজিয়াটাকে তাদের টেলিকম লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিটিআরসি ওই দুই অপারেটরকে এ নোটিশ পাঠায়।
এ বিষয়ে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান বলেন, নিরীক্ষা দাবি অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ না করায় গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলে ওই দুই অপারেটরের কাছে বৃহস্পতিবার বিকেলে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ৪৬(২) ধারা অনুযায়ী গ্রামীণফোন ও রবির টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, ৩০ দিনের মধ্যে তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সরকারের পাওনা আদায়ে গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করতে বিটিআরসিকে অনুমতি দেয়। এরপরই বিটিআরসি ওই দুই অপারেটরকে নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।
বুধবার গ্রামীণফোন ও রবির প্রতিনিধি বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাওনা পরিশোধের বিষয়টি মীমাংসা করতে আরো সময় চায়। তবে বিটিআরসি অপারেটর দুটির আবেদন খারিজ করে লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ‘বিটিআরসির নোটিশটি অযৌক্তিক এবং একই সঙ্গে একটি বিতর্কিত নিরীক্ষা দাবির বিষয়ে আমাদের গঠনমূলক সমাধান প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের অনীহার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। নোটিশটি পর্যালোচনা করার পরেই গ্রামীণফোন উত্তর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান, শেয়ারহোল্ডার ও সম্মানিত গ্রাহকদের অধিকার রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্যায্য যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট, ২০০১ এর ৪৬ ধারা অনুযায়ী বিটিআরসি যে নোটিশ পাঠিয়েছে, তাতে যৌক্তিক কারণে কমিশনকে লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অপারেটরদের দেওয়া লাইসেন্সের শর্ত ও বিধিবিধান ভঙ্গ হলে এমন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে কমিশন।
কোনো মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিতের আগে কমিশনকে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের ব্যাখ্যা চেয়ে ৩০ দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টেলিকম অ্যাক্টের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ১৩ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে কমিশন কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। এতে অপারেটরদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বিটিআরসি।
দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকের ৭৬ শতাংশই হচ্ছে গ্রামীণফোন ও রবির।
প্রসঙ্গত যন্ত্রপাতি আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রামীণফোন ও রবি অজিয়াটার কাছে সরকারের পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ও রবি অজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি বকেয়া রয়েছে।