ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে নিহত ২

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে বুধবার (২৬ মে ) সকালে। ভারতে এটির অগ্রভাগ ও চোখ আঘাত হানলেও ঝড়ের লেজের একটি অংশ যেতে পারে খুলনার সুন্দরবনের উপর দিয়ে। ফলে সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে দেখাতে বলা হলো তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত।
এদিকে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আগেই দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আকস্মিক টর্নেডো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বয়ে যাওয়া দেড় মিনিটের টর্নেডোতে অন্তত দু’জন নিহত ও কয়েক ডজন বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতের আগে আজ রাজ্যের হুগলি জেলার চিনসুরা এলাকায় আকস্মিক টর্নেডো বয়ে গেছে। এ সময় বজ্রপাতে অন্তত দু’জন নিহত ও ৪০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী সকালের দিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের ওডিশা রাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দেড় মিনিটের স্থায়ী ওই টর্নেডোর আঘাতে ৪০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমি ইতোমধ্যে রাজ্যের সব জেলার ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আজ রাতে নবান্নে থাকবো। আমি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া প্রস্তুতির ব্যাপারে মমতা বলেন, ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজ্যের ৫৪ হাজার ত্রাণ কর্মকর্তা ও কর্মী, ২ লাখ পুলিশ ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
রাজ্যের আবহাওয়া দফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তীব্র গতিবেগের বাতাসের কারণে বাড়িঘর ধ্বংস, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়তে পারে। রাজ্যের উপকূল তীরবর্তী অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ে সেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ১০০ কিমি বেগে ঝড়ের সঙ্গে অতিভারী বর্ষণ হবে। একই সঙ্গে পূর্ণিমার প্রভাবে রয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারের আশঙ্কা।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ২৬ মে দুপুরের দিকে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝ দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ উঠে যেতে পারে ১৮৫ কিমি। এরপর স্থলভাগে উঠে এলে ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় করে বৃহস্পতিবার নিম্নচাপে পরিণত হবে এটি।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। বিকেল ৩টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ইয়াস উপকূল অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার নিমাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে সাগরে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে। অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে।
এদিকে, ইয়াসের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, খুলনা,বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিমি বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে ৪০ থেকে ৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড় বয়ে যেতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরকে এক নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, ইংরেজিতে যাকে জেসমিন বলা হয়, বাংলায় জুঁই ফুল।