চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ২২৬

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি জটিল উপসর্গের রোগীও বাড়ছে সমানতালে। গত দুই সপ্তাহে যেখানে পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক, সেখানে বর্তমানে প্রায় সব হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই দুই সপ্তাহকে বলছেন ‘করোনার পিকটাইম’।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন ২২৬ জন। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ১৩১ জন নগরের ও ৯৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৩৫৯ জন নগরের ও ১২ হাজার ৩৮ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরে একজন করোনায় মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৬৬২ জন। এর মধ্যে ৪৬৩ জন নগরের ও ১৯৯ জন উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৭৮ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৯৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় ৪২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।
এছাড়া,ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাব ৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮জন, শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২২জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জন, জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে ১১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬জন, এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাবে ৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই হঠাৎ অবনতির কারণ কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আসলে আমাদের এখানে তো ঠিক সেভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের দুজন রোগী পাওয়া গেছে— যারা ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি টান্সমিশনের স্বীকার বলেই আমরা ধারণা করছি। এই কারণে হঠাৎ সংক্রমণ ও জটিল উপসর্গের রোগী বাড়তে পারে। এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নিয়ে কন্ডিশন খারাপ হওয়ার পরেই বেশিরভাগ রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার একটা বিষয়ও আছে।
চট্টগ্রাম নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে গত ১৫ দিন আগে ১৫ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডে রোগী থাকতো ৭-৮ জন করে। কিন্তু গত দুই সপ্তায় এই হাসপাতালের সব বেডে রোগী ভর্তি থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান।
প্রায় একই চিত্র নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে গত ১০ দিনে প্রতিদিনই প্রায় ৭-১০ জন করে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে এই হাসপাতালে। এই সময়টাতে তাদের ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ডের সব বেডে রোগী ভর্তি ছিল। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এই চিত্র ছিল সম্পুর্ণ ভিন্ন।
চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, প্রায় সব হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। এই মুহূর্তে আইসিইউ বেড কোথাও তেমন একটা খালি নেই। তবে আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যাবহার করে জটিল উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, প্রস্তুতিও বেশ ভালই আছে। তবে এখানে মানুষের সচেতনতাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তি মারা যান।