জরুরি অবস্থা তুলে নিচ্ছে জাপান

রোববার থেকে রাজধানী টোকিও এবং প্রতিবেশী তিনটি জেলা থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার । করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) কারণে গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এসব এলাকায় জরুরি অবস্থা চলছিলো। বৃহস্পতিবার সকালে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে আলোচনার পর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সুগা ঘোষণা দেন, রোববার থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার অর্থ হচ্ছে, পুরো জাপান থেকে জরুরি অবস্থা এখন তুলে নেওয়া হবে। ওসাকা, ফুকুওকাসহ জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি জেলা থেকে জরুরি অবস্থা এর আগেই তুলে নেওয়া হয়। তবে রাজধানী টোকিও এবং প্রতিবেশী তিনটি জেলা—কানাগাওয়া, চিবা ও সাইতামায় করোনা পরিস্থিতির ধীর অগ্রগতির কারণে জরুরি অবস্থা বহাল ছিল।
জাপানে, বিশেষ করে রাজধানী টোকিও এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি এখনো আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়নি। তবে সরকার মনে করছে, সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ অনেকটা কমে আসায় হাসপাতালে জায়গা পাওয়ার সমস্যাও এখন সহজ হয়ে এসেছে। ফলে অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে সরকার এখন তৎপর। আর এ কারণেই নাগরিকদের মধ্যে দেখা দেওয়া উদ্বেগ পুরোপুরি দূর না হলেও সরকার মনে করছে, জরুরি অবস্থা ছাড়াই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।
জাপানে গত এক সপ্তাহের হিসাবে দেখা যায়, দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যায় ওঠানামা এখনো অব্যাহত। বিশেষ করে রাজধানী টোকিও এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। টোকিওতে যেমন আজ নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩২৩। এক দিন আগের হিসাব ছিল চার শতাধিক।
এরপরও সরকার কেন জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর বিলম্বিত করতে চায়নি, তার পেছনে অর্থনীতির হিসাব ছাড়াও আছে বিশেষ করে পশ্চিম জাপানে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ পরিস্থিতির তেমন অবনতি না হওয়া। এ ছাড়া সরকার আরও মনে করছে, চলতি মাসের শেষ দিক থেকে নিয়মিত টিকাদান শুরু হলে ভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি মানুষের মনোবলও চাঙা হয়ে উঠবে। ফলে আর বিলম্ব করার প্রয়োজন নেই বলেই সরকার মনে করছে।
টোকিও ও আশপাশের এলাকাগুলোর ওপর আরোপ থাকা করোনাভাইরাস জরুরি অবস্থা আগামী রোববার তুলে নেওয়া হলেও বিশেষ করে রেস্তোরাঁ ও পানশালা বেশি রাত পর্যন্ত খোলা না রাখার অনুরোধ জানানো সরকার অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া ক্লাস্টার সংক্রমণের সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নগর এলাকার বিনোদনের কেন্দ্রগুলোতে ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা জোরদার করে নেওয়ার অনুরোধ স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের প্রতি সরকার জানিয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাসের রূপান্তরিত স্ট্রেইন দ্রুত খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া জোরদার করে নেওয়ার ওপরও সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্ব আরোপ করেছে। ফলে সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি পূর্ণোদ্যমে শুরু হলে দেশে ভাইরাসের বিস্তার অনেকটাই কমে আসবে।
টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার দিক থেকে জাপান অবশ্য অন্য অনেক দেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত না হয়ে টিকাদান কর্মসূচি জাপান শুরু করতে চায়নি বলেই এ বিলম্ব। ফাইজারের টিকার কয়েক দফা চালান জাপানে ইতিমধ্যে এসে পৌঁছালেও ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রায় ৪০ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার পর তাঁদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না, জাপান তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জিতে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে সীমিত মাত্রার প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটেনি। ফলে জাপান সরকার এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদানের মধ্য দিয়ে শুরু করে দ্রুত দেশজুড়ে টিকাদানের প্রক্রিয়া শেষ করে নিতে চাইছে।