জাতীয় দ্বাদশ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই

জাতীয় দ্বাদশ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই

 “জাতীয় দ্বাদশ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে দক্ষিণ বঙ্গের আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। বরিশালের একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত বাবুগঞ্জ-মূলাদী উপজেলা দুটি এখন আওয়ামী ঘাঁটিতে রুপান্তরিত হয়েছে। হয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন। সাধারণ ভোটাররা পুনরায় আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আর এটা সম্ভব হযয়েছে একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলে দেশের উন্নয়নের রূপরেখা দেখে। তাই দেশের সাথে সমন্বয় রেখে বরিশাল ৩ আসনভুক্ত বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলার উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে পেতে চাই। এটা শুধু আমার নয় এটা সাধারণ মানুষের ইচ্ছা এবং প্রত্যাশা”। গত বুধবার বিকেল ৪টায় বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে এক মত বিনিময় কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী দুলাল বলেন, “আমরা এ দুটি উপজেলার আওয়ামী নেতা কর্মীরা আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে জাতীয় নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তাব সহ অনুরোধ জানাবো। যদি তিনি কোনক্রমে সম্মতি না জানান এবং দল যদি সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নৌকা প্রতিক নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক”। 
কাজী দুলাল বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা বরিশাল-৩ আসনে প্রকৃত নৌকার মাঝি পাইনি। হয় ভাড়াটিয়া মাঝি অথবা জোটের অণ্য কোন প্রার্থীকে এ সংসদীয় আসনের প্রার্থী করা হয়েছে। এবারের দ্বাদস সংসদ নির্বাচনে আমরা বাবুগঞ্জ-মুলাদীবাসী আর ভাড়াটিয়া নৌকার মাঝি চাইনা। আমাদের রাজনৈতি অভিভাবকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে একটাই দাবী থাকবে বরিশাল-৩ বাবুগঞ্জ মুলাদীআসনে নৌকার প্রকৃত মাঝিকে মনোনয়ন দিতে হবে। কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, এ আসনে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ কে মনোনয় দেওয়ার জোর দাবী জানাবেন। 

কাজী ইমদাদুল হক দুলাল দীর্ঘ ৪ দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এরমধ্যে গত ২ দশক ধরে আওয়ামী লীগের পরিশুদ্ধ রাজনীতির একজন আদর্শিক নেতা ও সংগঠক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সর্বদা নিরলশ কাজ করে যাচ্ছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩ মেয়াদে টানা দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। এর পাশাপাশি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

বাল্যকাল থেকেই তুখোড় মেধাবী কাজী দুলাল বরিশাল সরকারি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল (বর্তমান বরিশাল ক্যাডেট কলেজে) থেকে ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক পাস করে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন।

আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে শৈশব থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ বুকে লালন করে চলতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার জন্য শিশুকালে তিনি তার বাবার রেডিওটা নিজের গলায় বেঁধে ঝুলিয়ে সারাবাড়ি হেঁটে বেড়াতেন। তিনি বরিশাল সরকারি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তৎকালীন বরিশালের ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের হাত ধরে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৮১ সালে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আবার সেখানেই ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের আগেই তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদান এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার কারণে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (বাকসু) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। বরিশাল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পাস করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মহানগর ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ওই বছরই বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাবুগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে পর্দাপণ করেন কাজী দুলাল। সেই সম্মেলনে বর্তমান বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা কামাল চিশতী তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভিষেকের আগে কাজী দুলাল ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ছাড়াও মহানগর যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগে চরম নেতৃত্ব সংকট দেখা দেয়। বিরোধী দলে থাকায় মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। দলের সেই দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে ১৯৯২ সালে ঢাকা থেকে এসে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন কাজী দুলাল। তাকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত করে তার হাতে দলের হাল তুলে দেন তারই রাজনৈতিক অভিভাবক জননেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্। 


এরপর নিজের মেধা, সততা, পরিশ্রম ও কষ্টার্জিত অর্থ ঢেলে দিয়ে বাবুগঞ্জে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করেন তিনি। সেই অসামান্য কাজের স্বীকৃতিসরূপ ২০০২ সালে তাকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার অর্পণ করেন তার রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিগত ২০০২ সাল থেকে ৩ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগকে দুঃসময়ে বাঁচিয়ে রাখা ও সংগঠিত করার এক দীর্ঘ অনন্য ইতিহাসের জন্মদাতা তিনি। ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে দল চালাতে নিজের জমি এবং টাওয়েল কারখানাও বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে। 

উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত, সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সমাদৃত কাজী দুলাল লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জনের পরেও আবার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এলএলবি পাস করেন।

বাবুগঞ্জ উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ার স্বপ্ন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ‘নিজে অন্যায় করবো না এবং কাউকে অন্যায় কাজে প্রশ্রয়ও দেবো না’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলা পরিষদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনেন কাজী দুলাল। নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও লুটপাট বন্ধে বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ৪০ দিনের অতিদরিদ্র ও কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক বাছাই ও তাদের ব্যাংক হিসাবে বিল পরিশোধের মাধ্যমে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেন।

এছাড়াও মাদক, জঙ্গিবাদ ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তার সোচ্চার অবস্থান এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের কারণে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র একবছরের মাথায় তিনি উপজেলাবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করে প্রকাশ্য জনসম্মুখে উন্মুক্তভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তিনি সরকারি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন।

এ প্রসঙ্গে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, উপজেলার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ ও দারিদ্রমুক্ত করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়াও অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুদান ও ভাতা যাতে প্রকৃত হকদারদের হাতে পৌঁছানো যায় সেই লক্ষ্যে সততার সঙ্গে কাজ করছি। সে লক্ষে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবুগঞ্জ মুলাদী আসনে নৌকার মাঝি হিসেবে লড়তে চাই। তবে আমাদরে অভিভাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ যদি মনে করেন এ আসনে আমার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি অন্য যে কাউকে মনোনয়ন দিবেন আমি সহ বাবুগঞ্জ মুলাদী আসনের সকল নেতা কর্মী তার পক্ষে কাজ করে প্রকৃত নৌকার মাঝিকে বিজয়ী করে আনবো ইনশাআল্লাহ”।