ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা মানুষদের নিয়ে আতংকিত আমতলীবাসী

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা মানুষদের নিয়ে আতংকিত আমতলীবাসী


 

মরনঘাতি করোনাভাইরাসের নিয়ে  ভয় ও আতংকে দিন কাটছে সারাদেশসহ বরগুনার আমতলী উপজেলার মানুষদের। এ উপজেলার মানুষদের সচেতন ও ঘরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন। করোনা সংক্রমণ ও রোগীর সংখ্যা যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য পুরো উপজেলাকে লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। 

দেশে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গোপনে রাতের আধারে বিভিন্ন  ট্রলার ও বালুবাহী কার্গোতে করে আসা কিছু মানুষ আমতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে বলে জানাগেছে। এদের মধ্যে কিছু গার্মেন্টস কর্মীও আছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে একটি বালুবাহী কার্গোতে একশ নয় জন ইটভাটা শ্রমিক উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর আসে। এসময় তাদের পুলিশ আটক করে উপজেলার একটি সাইক্লোন সেল্টারে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছেন। এর পরের দিন গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) ভোররাতে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এলাকায় অপর একটি ট্রলার যোগে মুন্সিগঞ্জ থেকে তেইশ জন শ্রমিক পৌছালে সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। এরপরেও প্রতিদিন গোপনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে কমবেশী লোকজন এসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জে ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেছেন। এতে মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে। আতংকিত মানুষজন প্রতিদিন সাংবাদিক, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে মুঠোফোনে কল দিয়ে তাদের আতংকের কথা জানাচ্ছেন।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের শাখারিয়া এলাকার আবুল কালাম আজাদ, চাওড়া ইউনিয়নের তালুকদার বাজার, ঘটখালী এলাকার সোহেল- হেলাল, আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী এলাকার ইমরান, হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া এলাকার শাহিন ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের হরিদ্রাবাড়িয়া এলাকার ইলিয়াস মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, তাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেক লোকজন আসছে। এদের অনেকে আত্মগোপন করে বাড়ীতেই অবস্থান করেছে। অনেকে আবার বাড়ীতেই অবস্থান করে প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিষেধ করলেও শুনছেন না। এ কারনে আমরা এলাকাবাসী তাদের নিয়ে খুবই আতংকের মধ্যে আছি। আবার অনেক এলাকার আতংকিত মানুষজন মুঠোফোনে তাদের আতংকের কথা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আমতলী থানার পরিদর্শক মোঃ শাহআলম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আতংকিত মানুষের ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা চেষ্টা করতেছি বহিরাগতরা যাতে আমতলীতে প্রবেশ করতে না পারে। সড়কপথে আমতলী উপজেলার প্রতিটি প্রবেশপথ আমরা বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ মোতায়েন করেছি। এখন দেখছি রাতের আধারে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ট্রলারযোগে মানুষ আসছে। ইতিমধ্যে আমরা দুটি ট্রলার থেকে অনেককে আটক করে হোম কোয়ারেন্টাই ও কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেছি। বাহির থেকে আসা আত্মগোপনকৃতদের চিহ্নিত করে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রশাদ অধিকারী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে অনেকে আমতলীর বিভিন্ন গ্রামে এসেছেন ও তারা আত্মগোপন করে আছেন। করোনা রোগের সংক্রমণ এই এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশী। তাই এসব এলাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশী। যা আমতলীবাসীর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি এসব এলাকা থেকে যারা এসেছেন তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ফ্রি করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বহিরাগত যারা গোপনে আমতলী এসে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। চৌদ্দ দিন ঘর থেকে বের হবেন না। কোথাও কোন অযাথা আড্ডা দিবেন না। আর যাদের করোনাভাইরাস উপসর্গ আছে তারা দ্রুত হাসপাতালে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। অন্যথায় নৌবাহিনী, পুলিশকে অবহিত করে আপনাদের আটক করে নিয়ে আসা হবে।