তারুণ্যই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় : ববিতে জাফর ইকবাল

কথা সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, ‘তারুণ্যই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কোন কারনে হতাশ না হয়ে বরং সকল বিষয় উপভোগ করতে হবে। শ্রেনী কক্ষের শিক্ষাই যথেষ্ঠ নয়, এর বাইরেও অনেক কিছু শেখার আছে। তোমাদেরকে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে আরও বেশি জড়িত হতে হবে। নিজেদের বিকশিত করার জন্য তোমাদেরকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। তোমরা যে বিষয়ে পড়ালেখা কর না কেন সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জণ করতে হবে। কেননা সফলতা লাভের জন্য দক্ষতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই। তবে জীবনে ভাল কিছু করতে হলে টেকনোলজি তথা তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার রোধ ও সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
সোমবার (২৮ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে । বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কথা সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে আরো বলেছেন, ‘শ্রেনী কক্ষে পাঠ দান করানো হয়ে মাত্র ৫ ভাগ। বাকী ৯৫ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক অন্যান্য শিক্ষার মাধ্যমে আত্মস্ত করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কোন প্রশিক্ষন কেন্দ্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বছরের শিক্ষা কোর্স ২ বছরেও শেষ করা যায়, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ে শিক্ষা গ্রহন এবং তাদের মেধা মনন বিকাশের জন্যই পাঁচ বছরব্যাপী কোর্স করানো হয়। এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান ধারন করতে পারেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগে একাডেমিশিয়ান বেঁছে নেয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। তারা একাডেমিশিয়ান নয়। কেউ লবিং করে উপাচার্য নিয়োগ পায়। এটা আনফরচুনেট। একজন একাডেমিশিয়ানকে ভিসি (নেতা) নিয়োগ দেয়া হলে তিনি তার চারপাশে একাডেমিশিয়ানদের শিক্ষক হিসেবে বেঁছে নেবেন। তার চারপাশে থাকবে গবেষক। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অটোমেটিক ভালো ভাবে চলবে।’ এ জন্য সত্যিকারের একাডেমিশিয়ানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে আনার জন্য সরকার তথা রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন এই শিক্ষাবিদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে অর্থ প্রদান করে তা দিয়ে ১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব। জনগনের দেয়া রাজস্বে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ যোগান হয়।’ তাই জনগনের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত বলে মনে করেন উপাচার্য।
কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. মোঃ মুহসিন উদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব ড. মোঃ খোরশেদ আলম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আব্দুল কাইউম ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা বিশ^াস, নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মরিয়ম নূপুর ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল শাওন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সহধর্মীনি প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হকসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, সুধীজন, সাংবাদিকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নবীনবরণ উপলক্ষ্যে বিকেলে থেকে রাত অব্দি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি বিভাগে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে মোট ১ হাজার ৫শ’ ১২জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।