দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম ‘ বুদ্ধমূর্তি

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম ‘ বুদ্ধমূর্তি

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম ‘সিংহশয্যায় শায়িত বুদ্ধমূর্তি’ দানোৎসর্গ সম্পন্ন হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বুধবার শুরু হয়ে শুক্রবার নানান মাঙ্গলিক আয়োজনে শেষ হয়েছে। 

আয়োজকরা জানায়, জুরাছড়ি উপজেলায় সিংহশয্যায় শায়িত বুদ্ধমূর্তিটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি। অনুষ্ঠানের শেষ দিন শুক্রবার রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বন বিহারে হাজারো পূণ্যার্থীর ঢল নামে। সকাল থেকে পঞ্চশীল প্রার্থনা, অষ্টপরিষ্কার দান, ধর্মীয় দেশনা, ভাবনা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩০ হাজার পূণ্যার্থী অনুষ্ঠানের শেষদিনে অংশ নিয়েছে বলে আয়োজকরা জানায়।

বিহার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ১২ একর জায়গাজুড়ে জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বনবিহার। জুরাছড়ি বাজার পেরিয়ে গ্রামীণ সড়কের শেষদিকে পাহাড়ের উঁচুতে সবুজ গাছগাছালি ভরা অরণ্যে এই বিহারের অবস্থান। ২০১২ সালে বিহারে বনভান্তের স্মৃতিস্মারক সংরক্ষণ হিসেবে বুদ্ধমূর্তি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। আয়োজকরা জানায়, সরকারি কোনও সহযোগিতা ছাড়াই এই বৃহৎ নির্মাণযজ্ঞে শামিল হয় বিহার কমিটি। ২০১৬ সালে বুদ্ধমূর্তি কাজ শুরু হয় এবং ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

বিহার কমিটির অন্যতম সদস্য সুমন্ত চাকমা বলেন, শুরুতে এই উদ্যোগ এত সহজসাধ্য ছিল না। স্থানীয়রা কায়িক, মানসিক ও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। তবে দৃষ্টিনন্দন এই বুদ্ধমূর্তি তৈরিতে শুধু জুরাছড়িবাসী নয়; দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের সহযোগিতা ছিল। আমরা কোন সরকারি সহযোগিতা না নিলেও সব সম্প্রদায়ের এতে অংশগ্রহণ ছিল। 

তিনি আরও বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ ‘সিংহশয্যায় শায়িত বুদ্ধমূর্তি’। আমাদের বিশ্বাস জুরাছড়ির এই বুদ্ধমূর্তি দর্শনে বছরে লক্ষাধিক পূণ্যার্থী ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন আসবে। এতে আমাদের এলাকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও বড় ধরনের একটি পরিবর্তন আসবে।

শুক্রবার তিন দিনের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, জুরাছড়িতে দৃষ্টিনন্দন এই বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের পর এই এলাকায় পূণ্যার্থীসহ পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাদের নিরাপত্তায় যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দেবো।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সিংহশয্যায় শায়িত বুদ্ধমূর্তি আমাদের জুরাছড়িকে দেশ ও দেশের বাইরে নতুনভাবে উপস্থাপন করবে। এতে দেশে যে রিলিজিয়াস ট্যুরিজম আছে সেটাও বিকশিত হবে এবং এর মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধের যে শান্তির বাণী সেটাও চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, গৌতম বুদ্ধের শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই বুদ্ধমূর্তি উৎসর্গ করা হয়েছে। দীর্ঘতম এই বুদ্ধমূর্তি ঘিরে এই এলাকায় পূণ্যার্থীর ঢল নামবে। এতে এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন বোর্ড পর্যটন প্রসারে কাজ করছে।