দোকানদার থেকে কোটিপতি আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম

দোকানদার থেকে কোটিপতি আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সামান্য ওষুধ দোকানদার থেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম আলী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং দুইবারের জেলা পরিষদ সদস্য। তার দ্রুত উত্থানের পেছনে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের প্রভাব ও সহযোগিতা।

আসলাম আলী একসময় ভাঙ্গুড়ার বাসস্ট্যান্ডে একটি টিনের ঘরে ওষুধের দোকান চালাতেন। তবে ২০০৮ সালে মকবুল হোসেন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার জীবন পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে মকবুলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি দ্রুত অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার মালিক হয়ে ওঠেন। ২০১৭ সালে মকবুলের সমর্থনে তিনি প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন।

বর্তমানে আসলাম আলী একটি বহুতল ভবনের মালিক এবং তার নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। নগদ কয়েক কোটি টাকার পাশাপাশি তিনি প্রচুর জমি কিনেছেন। দৃশ্যমান আয়ের তেমন কোনো উৎস না থাকলেও তিনি দাবি করেন তার ধান, চাল, পাটের ব্যবসা এবং ঠিকাদারি লাইসেন্স রয়েছে।

আসলামের বিরুদ্ধে স্কুল, কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগে তিনি নিলাম ডাকতেন। বেশি টাকা দেওয়ার প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে আরও বেশি টাকা পেলে আগের প্রার্থীদের সরিয়ে নতুন প্রার্থী নিয়োগ দিতেন।

জেলা পরিষদের প্রকল্পের টাকাও ছিল তার আয়ের বড় উৎস। তিনি বরাদ্দের কাজ না করে বা নামমাত্র কাজ দেখিয়ে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করতেন। উত্তর মেন্দা ডেঙ্গাপাড়া জামে মসজিদের ৩ লাখ টাকার প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার টাকা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করেন।

আসলাম আলী তার বিরোধীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন এবং মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি টাকার বিনিময়ে বিএনপির কিছু নেতাকে নিজের পক্ষে রেখেছেন, যার ফলে স্থানীয় জনগণ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।

অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে আসলাম আলী বলেন, “আমার ধান, চাল ও পাটের ব্যবসা আছে। দুইটি ঠিকাদারি লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া আমার স্ত্রী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।”

সরকার পরিবর্তনের পরও আসলাম আলী এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।