দ্রুত ধান কাটার জন্য হাকালুকিতে মাইকিং

বিরূপ আবহাওয়া থেকে বোরো ধান বাঁচাতে দ্রুত ধান কাটতে মাইকিং করা হচ্ছে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকায়। ধান কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মাইকিং চলবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সোমবার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় হাকালুকি হাওরের পালেরমুড়া এলাকায় গিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং এর সত্যতা পাওয়া যায়।
যোগাযোগ করা হলে কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন জানান, আবহাওয়া অফিস সূত্রে জেনেছি সামনের দিনগুলোতে ঘূর্ণিঝড়সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো ফসল যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য মাইকিং চলছে।
হাকালুকি হাওরে কথা হয় কৃষক আব্দুল হালিমের সাথে তিনি জানান, ধান পেকে গেছে কিন্তু আরও কয়দিন অপেক্ষা করছিলেন যেন আরও ভালো ভাবে পাকে। তবে প্রায় রাতে বৃষ্টি হচ্ছে যা ভয় দেখাচ্ছে। আগে কাটবেন কিনা দ্বিধায় থাকলেও কৃষি বিভাগের মাইকিং এর কারণে তিনিসহ অনেকেই বোরো ধান কাটতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মৌলভীবাজারে চলতি বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৩শ ৪৫ হেক্টর। এতে ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর মৌলভীবাজারে বোরো ধানের রেকর্ড উৎপাদন হবে। আবহাওয়ার কারণে যেন ধান নষ্ট না হয় তাই আমরা দ্রুত ধান কাটতে উৎসাহ দিচ্ছি।
এদিকে হাকালুকির মতো জেলার হাইলহাওর, কাওয়াদিঘী হাওরাঞ্চলের কৃষকের গোলায় বোরো ধান ওঠা নির্ভর করছে প্রকৃতির ওপর। কিন্তু ইতিমধ্যেই মৌলভীবাজারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা ছাড়া করোনাকালে শ্রমিক সংকট ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের। তবে প্রশাসন বলছে তারা এই বিষয়ে অবগত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, কৃষকরা যাতে সময়মতো পাকা ধান ঘরে তুলতে পারেন সে জন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ তাদের পাশে আছে। করোনার কারণে শ্রমিক সংকটে হতে পারে, তাই আমরা আগে থেকেই চা শ্রমিকদের ধান কাটতে যুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওর বিশেষ করে হাকালুকি হাওর দেশের অন্যতম শীর্ষ শস্যভান্ডার। তবে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই তলিয়ে যায় হাকালুকি হাওর। উজানে ভারত অংশে বৃষ্টি হলে সেই পানি দ্রুত নেমে আসে হাওরে, যার কারণে প্রায় বছর প্লাবিত হয় এই হাওরের ফসল। তাই বছর বছর বোরো নিয়ে চিন্তিত থাকেন কৃষক এবং কৃষি বিভাগ। প্রয়োজনে নেওয়া হয় অগ্রিম পরিকল্পনা। এ বছর করোনার সংকটের মধ্যে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যেন ফসল প্লাবিত না হয় তাই সম্মিলিত চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ ও কৃষক।