নারী ও শিশু নয়, মানুষের মর্যাদা দিতে হবে

সারা দেশে নারী ও শিশুরা নানা ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। হচ্ছে ধর্ষণসহ শ্লিলতাহানীর শিকার। পশুবৃত্তির লালসার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা থেকে বের হতে না পারার কারণেই নারী ও শিশুরা ঘরে বাইরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী ও শিশুদের কামনা-বাসনার দৃষ্টি দিয়ে দেখার প্রবণতা থেকে বের হওয়া অত্যন্ত জরুরী। সেজন্য অবশ্যই নারী ও শিশুকে বিশেষ শ্রেণিতে না দেখে মানুষের মর্যাদা দিতে হবে। নারী ও শিশুরা যদি মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতিটি কর্মকা-ে সমান সুযোগ পায় তাহলে বৈষম্য কমবে। কমবে ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ সব ধরণের নির্যাতনের ঘটনা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী-পুরুষকে সমান মর্যাদার আসন দিতে হবে। নাগরিক হিসেবে নারী-পুরুষ ও নারী শিশুরা মানুষের মর্যাদা পেলে দেশ দ্রুত উন্নতির শিখড়ে পৌঁছাবে।
সমিক্ষায় দেখা গেছে, নারী ও শিশুরা ঘরে বাইরে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়। নারী শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয় নিকট আত্মীয় দ্বারা। স্বজনের দ্বারা নারী শিশুরা যে নির্যাতনের শিকার হয়, তা সব সময় প্রকাশ পায় না। অন্দরমহলে নারী ও নারী শিশুর কান্না বাইরে আসে না। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হলে পারিবারিকভাবে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। এর সঙ্গে নীরবতা ভেঙে আওয়াজ তুলতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এব্যাপারে শুন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করতে হবে।
তুমি নারী। তুমি হবে কোমল। তোমার এতো কথা বলার দরকার কি? তুমি অবলাই থাকো। তোমার জন্য বেশি শিক্ষার দরকার নেই। চাল-ডাল আর টাকা-পয়সার হিসাবটুকু জানলেই হবে। নারীর প্রতি এই বৈষম্যর কারণে এখনো নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারছে না। কেউ একটু এগিয়ে যেতে চাইলেই তাকে পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা চলমান। তারপরও থামতে না চাইলে তাকে ধর্ষণ করো, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং কটুউক্তি দিয়ে থামিয়ে দাও। নারী শিক্ষায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং কালো অধ্যায় না থাকলে আমাদের মেয়েরা, আমাদের নারীরা বাংলাদেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে পারতো। সম্ভাবানার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীরা আরও ভূমিকা রাখতে পারতো।
নারী-পুরুষের মধ্যে সৃষ্ট সকল বাঁধা অতিক্রম করা জরুরী। তা না হলে প্রগতির পথে হাঁটা সম্ভব নয়। আমাদের নারীরা লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এভারেস্ট জয় করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের নারীরা দেশের হয়ে ভূমিকা রাখছে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, পররাস্ট্রনীতি এবং প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের নারীরা এক একনজন বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। এজন্য আমাদের সহযোগী হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হলে সামনে যাবার পথ আরো সুগম হবে। সকল প্রকার বৈষ্যম দূর করতে পারলে নারীরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেই।
এতো এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে। সুযোগ পেলে নারীরা যে এগিয়ে যায় তার প্রমাণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সকল অর্জনে নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে চলা সম্ভাবনার পর সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। আমাদের কন্যা কিংবা মেয়ে কিংবা নারীরা এই সম্ভাবনা অব্যাহতভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ছুঁয়েছে। তবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ নানা কারণে নারীরা সামনে যেতে পারছে না। নারীর চলার পথ বন্ধ করতে এখনো অনবরত চেষ্টা চলছে। নেতিবাচক এই চেষ্টা থামাতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরির্তন ঘটিয়ে নারীর সহযোগী হতে হবে।