প্রতিশ্রুতি, সম্ভাবনা, দেশ এবং জাতির দীর্ঘ প্রতীক্ষা পদ্মা সেতু : ববি উপাচার্য ও ট্রেজারার

একটি প্রতিশ্রুতি, একটি সম্ভাবনা, দেশ এবং জাতির দীর্ঘ প্রতীক্ষা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ সপ্ন নয় বরং বাস্তব। দেশের ইতিহাসে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এই সেতু অন্যরকম এক মেগা প্রকল্প। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে অবশেষে পদ্মা সেতু উদ্ভোধন হয়েছে গত ২৫ জুন।
লাল-সবুজের এই দেশটি সব বাধা অতিক্রম করে আকাশসম উচ্চতাকে জয় করবে, অলঙ্ঘনীয় সব সূচককে স্পর্শ করবে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদাশীল এক বিস্ময়কর জাতি হিসেবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এই স্বপ্ন সম্ভবত প্রত্যেক বাঙালিই দেখেন। শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
পদ্মা সেতুর সম্ভবনা নিয়ে এবার কথা বলেছেন- পদ্মা সেতুর উপকার ভোগী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এবং ট্রেজারার ও উপাচার্য।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বি এম সোহেল রানা বলেন, ‘আমার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। লঞ্চে যাতায়াতে যেমন সময় বেশি লাগতো, খরচও বেশি হতো। বছরের ২টা ঈদ করতে অন্তত ঢাকা যেতে হয়। তবে এখন আর চিন্তা নেই। শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। এখন ঢাকা যেতে আর কষ্ট থাকবে না’
তবে সব কল্পিত-অকল্পিত গুজব আর চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান হয়েছে যা আমাদের আত্মগৌরবের, সক্ষমতার ও দৃঢ় মানসিকতার জায়গাটিকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এ শিক্ষার্থী।
ববির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, বিসিএস বা চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অনেক সময় দক্ষিণবঙ্গ থেকে গিয়ে পথে দেরী হবার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি এমন রেকর্ড অনেক আছে। একদিন আগে না গেলে পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হতো না। এখন এ ধরনের সমস্যা থাকবে না ভেবেই ভালো লাগছে। আমরা সবাই এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু হলের প্রোভোস্ট মো: আরিফ হোসেন এ বিষয়ে আনন্দের সাথে বলেন, ‘পদ্মাসেতু উদ্বোধন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে আশা করা যায় যে, বরিশাল-পটুয়াখালি-খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাবি, জাবি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হবে, আর্থিক দিক থেকেও সাশ্রয় হবে এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও মানোন্নয়ন ঘটবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, ‘পদ্মাসেতু বাংলাদেশে যোগাযোগ-ব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ সামগ্রিকভাবেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে। মূলত পদ্মাসেতু আমাদের সক্ষমতা এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবেই উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের সাথে সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। এতে শিক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্য, কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশের যে তিনটি ইউনেস্কো হেরিটেইজ, তার ২টিই দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এতে দক্ষিণাঞ্চল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ববহন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.ছাদেকুল আরেফিন তাঁর বিশ্লেষণের দিক থেকে বলেন, ‘পদ্মাসেতু উদ্ধোধনের জন্য প্রথমেই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। দেশ ও জাতির দীর্ঘ শ্বাস এই পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মাসেতুর কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের সাথে সংযুক্ত হবে এবং আমার বিশ্লেষণে পদ্মাসেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল হবে একটি বানিজ্যিক ও শিল্পনগরী। কেননা চট্টগ্রামের দিকে যদি তাকাই তাহলে বিদ্যৎ-গ্যাস এবং কক্সবাজারের পর্যটনের বিষয়টি চট্টগ্রামকে ঘিরেই হয়েছে। সেই আলোকে বরিশালে ভোলার গ্যাস ও পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ এবং কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এতে বরিশাল হবে বানিজ্যিক ও শিল্প নগরী।’
তিনি আরো বলেন, ‘পদ্মাসেতুর কারণে রিসোর্স কন্ট্রিবিউশন ও রিসোর্স পার্সন বাড়বে ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে পাবে নতুন সম্ভাবনাময় গতিশীলতা।’