বরিশালে অপসারণ হয়না ইংরেজি সাইনবোর্ড

২০১৪ সালে হাইকোর্টের বেঞ্চের এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ডে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার বন্ধ করতে বল্লেও আজ প্রায় ৮ বছরেও বরিশালে এই নির্দেশনা কাউকে মানতে দেখা যায়নি। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি সাইনবোর্ডের ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে কোন গুরুত্ব দেখা যায়না। তবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এ অবস্থায় ইংরেজি অক্ষরের সাইনবোর্ড অপসারণের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যক্রম নেই।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সরকারি দফতরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭-এর ৩ ধারায়ও সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সদর রোড, চকবাজার, কাকলীরমোড়, বাংলাবাজার, নতুন বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন কোম্পানি, ব্যাংক, ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, ইলেকট্রোনিক্স দোকানসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড ইংরেজি অক্ষরে লেখা। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানে বাংলা-ইংরেজি লেখাসহ সাইনবোর্ড চোখে পড়েছে। সেই হিসাবে ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ড অনেক বেশি।
নগরীর সদর রোডের এক ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, ‘বরিশাল নগরীতে টপ টেন, প্লাস পয়েন্ট, ইজি ফ্যাশন হাউজের দুটি শো-রুম, দর্জিবাড়ি, ভারগো, বে, বাটা, অ্যাপেক্স, সনির্যাগংস, সিঙ্গার, ট্রান্সকমসহ আরো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এই নির্দেশনা সম্পের্কে জানা সত্ত্বেও কেউ মানছে না।
সদররোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আজাদ হোসেন বলেন, ‘ইংরেজি অক্ষরে সাইনবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না এ বিষয়ে অবগত নই। তবে আদালতের নির্দেশনা আছে যেহেতু বাংলা অক্ষরের নতুন সাইনবোর্ড ব্যবহার করবো।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগারে শিক্ষার্থী মোহনা আক্তার জানান, বরিশাল নগরীর নামি-দামি শোরুম, ব্যাংক, ব্যাংকের বুথগুলোতে বেশিরভাগ ইংরেজি অক্ষরের লেখা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। এছাড়া কিছু কোচিং সেন্টার আছে যে গুলো বড় বড় ইংরেজি অক্ষরে বিজ্ঞাপন এবং সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আসছে। এসব স্থানে বাংলার ব্যবহার নেই বললেই চলে।
মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, ‘বাংলা ভাষার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। চারপাশে ভাষার ব্যবহার দেখলেই আমরা তা বুঝতে পারি। আমাদের সমাজে ইংরেজি বলা এবং তার বিভিন্ন ব্যবহার বর্তমানে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাই ভাবছেন, ইংরেজি নাম ব্যবহার করে দোকান মর্ডান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। আসলে এটি ভুল ধারণা তাদের। আইন প্রয়োগ করে এসব বন্ধ করা উচিত। বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুখ হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে তবে কত সংখ্যক ব্যবসায়ী ইংরেজি অক্ষরের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে তার নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। বছরের চলতি মাসেই সিটি করপোরেশন ও বরিশাল জেলা প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগে নগরীতে অভিযান চালিয়ে এসকল সাইবোর্ড অপসারণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তবে এর আগেও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে একাধিক বার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে বলে জানান বিসিসি’র নির্বাহী কর্মকর্তা।