বরিশালে করোনা ওয়ার্ডসহ হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ

বরিশালে করোনা ওয়ার্ডসহ হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে ময়লা অপসারণ, করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বেড বাড়ানো, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু, লিফপ্ট চালু করা, জনবল সমস্যার সমাধানসহ নান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা ওয়ার্ডের নতুন ভবনে রোগীদের জন্য ২টি লিফট চালু করা হবে। সোমবার থেকে বর্জ্য অপসারণ শুরু করবে বরিশাল সিটি করপোরেশন।

রোববার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভাগী কমিশনার, বরিশাল সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মর্তাদের নিয়ে যৌথ সমন্বয় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামসহ স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা  উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. আবদুর রাজ্জাক জানান, ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ২৪৪জন। কিন্তু সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৯৪জন। বাকি পদগুলো শুন্য। প্রতি দিন ১৫০০ থেকে ১৮০০ রোগী ভর্তি থাকে। তার মধ্যে করোনার ১৫০ বেড রয়েছে। আরও ৫০টি বেড বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সংকট তীব্র। তার মধ্যে গত এক বছর সিটি করপোরেশন হাসপাতাল থেকে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ রেখেছে। ফলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডকেল কলেজ হাসপাতাল একটি ময়লার কারখানা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার বলেন, জনবল সংকট তীব্র। তার মধ্যে সীমিত জনবল দিয়ে করোনা ওয়ার্ডও চালাতে হচ্ছে। 

অপর সহকারি পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, প্রয়োজন আইন মানে না। করোনা ভবনের জন্য আলাদা সেটআপ থাকা দরকার ছিল। কিন্তু তা নেই। মূল হাসপাতালের জনবল দিয়ে করোনা ওয়ার্ডও চালাতে হচ্ছে। ওই ভবনে লিফট না থাকায় সিলি-ার ওঠানো নামানোতে পুরো সিঁড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্রুত লিফট ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। 

ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ কুমার হালদার বলেন, বরিশালে আইসিইউ চালানোর দক্ষ জনবল নেই। ফলে বেশিরভাগ আইসিইউ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। হাইফো ন্যাজাল ক্যানুলা বেরসকারিভাবে অনেকগুলো দিয়েছে মানুষ। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের দক্ষ জনবর নাথাকায় অকেজো হয়ে আছে। অন্যদিকে করোনা ওয়ার্ডে ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা ওয়ার্ডের ভিজিটর হাসপাতালে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের মাধ্যমে জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বাদল বলেন, আগামী ৭দিনের মধ্যে করোনা ভবনে নুতুন দুটি লিফট স্থাপনের জন্য গণপূর্তকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মে মাসের মধ্যে আরও দুটি লিফট স্থাপন করা হবে। এসময় তিনি গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীকে বলেন, কেবল ঠকাদারের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন নিজেরে উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, করোনার এই মহামারীতে সবাই মিলে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডকেল কলেজ হাসপাতালের জনবল, বর্জ্য ব্যবস্থাপানা নিয়ে সবাই মিলে উদ্যোগ না নিলে সমাধান হবে না। সেই লক্ষ্যে বরিশাল সিটি মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ময়লা অপসারণ শুরু করবে। বরিশালের হাসপাতালের সার্বিক চিত্র স্বাস্থ্য সচিবের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালের জনবল সংকটের সমাধান করা হবে। সমন্বিতভাবে কাজ করলে বরিশাল মেডকেল কলেজ হাসপাতালের একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। এজন্য করোনা ওয়ার্ড সহ চিকিৎসা সেবায় নিযোজিতদের সঙ্গে আন্তসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সমস্যার মধ্যে ডাক্তার নার্সরা সেবা দিচ্ছেন তা দেখে সত্যি কষ্ট লাগছে। এতটা সীমিত সামর্থ নিয়ে তারা যে দায়িত্ব পালন করছেন, তারে পাশে সবার সহযোগী হয়ে থাকা দরকার। সেই জন্যই জেলা প্রশাসন বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা সবাই মিলে একটা পরিবর্তন আনতে চাই বরিশালের হাসপাতালে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে দ্রুত হাসপাতালের বর্জ্র অপসারণের উদ্যোগ নেবে সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের পরিচ্ছন্নতা কজে সহযোগিতার জন্য ১০জন জনবলও দেওয়া হবে। আজ সোমবার থেকে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ কাজ শুরু হবে।

সভায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জনবল। করোনা ওয়ার্ডেরৃ জন্য ১২টি আইসিইউ চালুৃ আছে। আরও ৪০টি আইসিইউ স্থাপন করা হবে। দক্ষ জনবল এবং করোনা ভবনে লিফট ও সেন্টাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ক্লিনিক্যাল বর্জ্য অপসারণসকরতে না পারা। বরিশাল সিটি করপোরেশন ময়লা অপসারণে সম্মত হয়েছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।