বরিশালে নানা আয়োজনে ক্লাবফুট দিবস উদযাপন

বরিশালে নানা আয়োজনে ক্লাবফুট দিবস উদযাপন

 বরিশালে নানা আয়োজনে ক্লাবফুট দিবস উদযাপন করা হয়।

ওয়াক ফর লাইফ’র উদ্যোগে বরিশাল নগরীর এ্যাড. হেমায়েত উদ্দিন আহম্মদ ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতালে ৪ জুন  সকাল ১০টায় কনফারেন্স রুমে ফিজিওথেরাপিস্ট ও পনসেট প্রাক্টিশনার মোঃ মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় ক্লাবফুট বা বাঁকানো পায়ের পাতা চিকিৎসায় অবহেলাকারী শিশুদের পিতা মাতাদের জন্য কাউন্সিলিংয়ের সেশন ও বর্ণাট্য র্্যালীর আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য ক্লাবফুট বা বাঁকানো পায়ের পাতা শিশুদের একটি জন্মগত শারিরীক প্রতিবন্ধকতা যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘congenital talipesequinovarus’ (CTEV)। সাধারণত শিশুর পায়ের পাতা গোড়ালি হতে ভেতরের দিকে বাঁকানো অবস্থাকেই ক্লাবফুট বলা হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৩৯০০ শিশু ক্লাবফুট নিয়ে জন্মগ্রহণ করে (এটি একটি শারীরিক সমস্যা যেখানে বাচ্চার ১টি বা ২টি পায়ের পাতা ভিতরের দিকে বাঁকানো থাকে)। চিকিৎসা না করালে এটি আজীবন বিকলাঙ্গতা বা পঙ্গুত্ব বয়ে নিয়ে আসে। ফলে, এসব শিশু পরবর্তীতে পরিবারের বোঝা হয়ে যায়, যা দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। পরবর্তী জীবনে এরা অন্য কোন পেশায় যোগ দিতে না পেরে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে বাংলাদেশের ভিক্ষুকদের উল্ল্যেখযোগ্য অংশ ক্লাবফুটধারী।

বড় শিশু বা বয়স্কদের ক্লাবফুট – এর চিকিৎসার জন্য অর্থোপেডিক অস্ত্রোপচারই একমাত্র ভরসা; কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল যা আমাদের দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয় না। তবে ছোট শিশুরা পনসেটি পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এটি অত্যন্ত কার্যকর, সুলভ এবং স্থায়ী ব্যবস্থা। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর পায়ের পাতার নরম বাঁকা অংশ ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যায়। দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব কলিন ম্যাকফারলেন বাংলাদেশে “ওয়াক ফর লাইফ” ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্লাবফুট নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সর্বোচ্চ তিন (০৩) বছর বয়সী শিশুদের পনসেটি পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয় যেখানে কোন বড় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশে “ওয়াক ফর লাইফ” ২০০৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। সাফল্য লাভের পর এই কার্যক্রম সারাদেশে ৩৪টি ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি “বাংলাদেশের জাতীয় ক্লাবফুট প্রকল্প” হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৬ সালে বিএমজে পুরষ্কার অর্জন করে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসা খরচ পুনরুদ্ধার মডেল স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের ক্লাবফুট শিশুদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে উক্ত প্রকল্পে।

গত ৩০ জুন ২০২২ সালে দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশন সাফল্যের সাথে ৩০,৮০০ এর অধিক ক্লাবফুট শিশুকে চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্তকরণের (সহযোগী সংস্থাসমূহ সহকারে) মাধ্যমে বাংলাদেশে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রাখার প্রত্যয়ে পরবর্তীতে জুলাই ২০২২ থেকে ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্যানক্রেড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (SWF) এর নিকট স্থানান্তরিত করা হয় এবং ইতোমধ্যে আগামী ২ বছর পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে এনজিও ব্যুরোর নিকট থেকে অনুমোদন লাভ করেছে।

এ-সময় উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন, অর্থোপেডিক্স সার্জন অধ্যাপক ডা: পীযুষ কান্তি। বর্ণাট্য র্্যালীতে উপস্থিতি ছিলেন,  ডায়াবেটিস হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ডা: মানবেন্দ্র সরকার, বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসের সমাজকল্যাণ অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম শাহীন, ভিডব্লিউএফ নার্সিং কলেজের সহ-অধ্যাপক সুদীপ কুমার নাথ, প্রভাষক কৌশিক রায়, কনসালটেন্ট আরাফাতুল ইসলাম, কনসালটেন্ট মো: সাব্বির, কাউন্সেলর ও ক্লিনিক সহকারী মো: আশিকুল ইসলাম (রাসেল) ও ক্লাবফুট বাচ্চাদের অভিভাবকরা।