বরিশালে স্ত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রির মামলায় স্বামীর ৭ বছর কারাদন্ড

বরিশালে স্ত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রির মামলায় স্বামী মো. ফরিদ উদ্দিন মল্লিককে ৭ বছর কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। আদালত রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই গৃহবধূকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য দন্ডপ্রাপ্ত ফরিদউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশালের মানব পাঁচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন আসামীর অনুপস্থিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
গত ২২ মার্চ বরিশালে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর ওই ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় এটি।
দন্ডপ্রাপ্ত ফরিদ উদ্দিন মল্লিক জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের তারাবাড়ি এলাকার মৃত জয়নাল মল্লিকের ছেলে। স্ত্রী ফারজানা আক্তারকে নিয়ে পাশ^বর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলার উত্তর রহমতপুর এলাকায় শ^শুড় বাড়ির পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন ফরিদ উদ্দিন।
আদালত রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই গৃহবধূকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য দন্ডপ্রাপ্ত ফরিদউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছে। আসামী মো. মঞ্জুরুল হোসেন গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পনের ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের মধ্যেমে এই অর্থ পরিশোধ করবেন। নতুবা পিডিআর আইনে আসামীর সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে।
মামলার উদ্বৃতি দিয়ে ওই ট্রাইব্যুনালের স্টোনোগ্রাফার মো. জালাল মিয়া জানান, শ^শুড়-শ^শুড়ি বাড়িতে না থাকার সুযোগে ২০০৭ সালের ৬ অক্টোবর দুপুরে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় যায় ফরিদ উদ্দিন। পরদিন ফারজানাকে খুলনা নিয়ে পতিতালয়ের মিন্টু সর্দারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে চলে যায় সে। এর ১৫-২০দিন পর ফরিদ উদ্দিন ফের ওই পতিতালয়ে গিয়ে অবস্থান করতে থাকে। ফারজানার কাছ থেকে নিয়মিত অর্থও আদায় করতো ফরিদ। কিছুদিন পর মিন্টু সর্দার ফারজানাকে ওই পতিতালয়ের আরেক সর্দারনী হোসনেয়ারার কাছে বিক্রি করে দেয়। এক পর্যায়ে ফারজানাকে নিয়ে মিন্টু সর্দার ও হোসনেয়ারার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। প্রায় ২ মাস পর ১০ ডিসেম্বর খবর পেয়ে ফারজানার বাবা ও শ^শুড় খুলনার ফুলতলা থানা পুলিশের সহায়তায় ওই পতিতালয়ে গিয়ে ফারজানাকে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ সর্দার মিন্টু ও সর্দারনী হোসনেয়ারাকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ফারজানার বাবা আবুল কালাম বাদি হয়ে অভিযুক্ত স্বামী ফরিদউদ্দিন এবং পতিতালয়ের দুই সর্দার ও সর্দারনী মিন্টু ও হোসনেয়ারাকে আসামী করে বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পতিতালয়ের দুই সর্দার ও সর্দারনীকে অব্যাহতি দিয়ে স্বামী ফরিদউদ্দিনকে একমাত্র অভিযুক্ত করে ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পরে ট্রাইব্যুনালে ৫জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন একমাত্র আসামী ও ভিকটিমের স্বামী ফরিদ উদ্দিন মল্লিককে উপরোক্ত দন্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা এবং সাজা পরোয়ানা জারীর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।