বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের গাছ তলায় ডায়রিয়া রোগী

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের গাছ তলায় ডায়রিয়া রোগী

বরিশালে করোনার সঙ্গে নতুন করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ধরাণ ক্ষমতার অধিক রোগী ভর্তি হওয়ায় অনেক রোগীর স্থান হয়েছে হাসপাতাল চত্বেরের গাছ তলায়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা এবং প্রয়োজনীয় স্যালাইন, ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোগীর স্বজনদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি। সাধ্য মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা এবং রোগীদের স্যালাইন ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত জায়গা এবং লোকবল স্বল্পতার কারণে রোগীদের প্রত্যাশা পূরণ করা যাচ্ছে না।

গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে দিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়িয়ে রোগীর স্থান হয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়, মূল ভবনের বাইরে খোলা স্থানে, এমনকি হাসপাতাল চত্ত্বরের গাছতলায়। গাছ তলায় এবং মূল ভবনের বাইরে খোলা আকাশের নীচে থাকা রোগীরা জানান, হাসপাতালে জায়গা না পাওয়ায় তারা বাইরে অবস্থান নিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিরা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তারা ভীড় করছেন বরিশালে ডায়রিয়া চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বেড, মেঝে, বারান্দা ছাড়িয়ে রোগীরা ঠাঁই নিয়েছেন মূল ভবনের বাইরে খোলা স্থানে, এমনকি গাছতলায়। তারা পাচ্ছেন না ডায়রিয়া রোগীর অতিপ্রয়োজনীয় আইবি স্যালাইন এবং ওষুধসহ অন্যান্য সেবা। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে তাদের।

হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রেজওয়ানুল আলম রায়হান বলেন, পানির মাধ্যমে রোটা ভাইরাস শিশুদের সংক্রামিত করে। আর বড়দের সংক্রামিত করে পানিবাহিত সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া। গরম পেলে ব্যাকটেরিয়া বেশি ছড়িয়ে পড়ে পানির মাধ্যমে। নোংড়া থাকা, ঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত না ধোয়া এবং পানি ফুটিয়ে পান না করার কারণে গরমের এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আমরা খাওয়ার পরে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে ধুই খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। এই গরমে সরকারিভাবে মানুষের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং পানি ফুটিয়ে পান করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, ডায়রিয়া চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান জেনারেল হাসপাতাল সুনাম খুইয়েছে। এখানে কোন চিকিৎসা নেই। দেয়া হয় না আইবি স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ। স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয় বাইরে থেকে স্যালাইনসহ ওষুধ আনার জন্য। ওয়ার্ড এবং ওয়ার্ডের বাইরে সর্বত্র নোংড়া পরিবেশ। 

জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ আয়শা আক্তার জানান, সরকারিভাবে যে ওষুধ এবং স্যালাইন বরাদ্দ আছে সেগুলো রোগীদের দেয়া হচ্ছে। লোকবল স্বল্পতা থাকলেও সাধ্যমতো ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছেন তারা। 

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এর মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে দুটি শয্যা এবং ২টি শয্যা মহিলা ওয়ার্ডে। সেখানে গতকাল দুপুর পর্যন্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন অর্ধ শতাধিক। ৪ জনের জায়গায় ৫০ জনের অধিক রোগী থাকলে কিছু সংকট তো হবেই। লোকবল এবং স্থান স্বল্পতার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না।