বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শরীর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শরীর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের জান্নাতুল নওরীন উর্মির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে দুবৃত্তরা। তাকে মারধরের পর জ্যামিতি বক্সের সুচালো কাটা কম্পাস দিয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনা তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর স্বজনরা। এদিকে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আহত ছাত্রীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আহত শিক্ষার্থী জান্নাতুল নওরীন উর্মি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্নাতক সম্মান চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা বরিশাল মহানগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। উর্মি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার বড় বোন অ্যাডভোকেট ফাতেমা-তুজ জোহরা মিতু মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহমানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এবং ভাই মেহেদী হাসান সোহেল মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। 

রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার উর্মি জানান, গত পহেলা মার্চ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সিঁড়িতে তাকে ঘিরে ধরে একদল মুখোশধারী। এ সময় সে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ওই ভবনের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে তারা। পরে তার হাতে থাকা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে উর্মির স্পর্শকাতর অঙ্গসহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে তারা। ওইদিন কোনমতে বাসায় ফিরে গেলেও নিরাপত্তার অভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল বুধবার দুপুরে উর্মিকে ভর্তি করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের মহিলা সার্জারী-২ ইউনিটে। 

উর্মির ভাই মো. মেহেদী হাসান সোহেল জানান, এর আগেও উর্মিকে নানাভাবে হুমকী-ধামকী দেয়া হয়। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও ক্ষত স্থানে ইনফেকশনের আশঙ্কায় গতকাল তাকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। 
উর্মির বোন ফাতেমা-তুজ জোহরা মিতু বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পরও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তিনিসহ স্বজনরা উর্মিকে নির্যাতনকারীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। 

উর্মির পরিবার জানায়, উর্মিকে হত্যার হুমকীর ঘটনায় ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ নগরীর বিমান বন্দর থানায় সাধারন ডায়রী করা হলেও কোন বিচার না পাওয়ায় দুর্বৃত্তদের হুমকীর মুখে ওই জিডি প্রত্যাহার করতে হয়েছিলো। এ কারণে এবার থানা পুলিশে কোন অভিযোগ করেননি তারা। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন উর্মির বোন ফাতেমা-তুজ জোহরা মিতু। 

হাসপাতালের মহিলা সার্জারী ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সালেহ মাহদী বলেছেন, উর্মির ক্ষত আশঙ্কাাজনক নয়। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানান, বিষয়টি তার জানা ছিলো না। গতকাল বুধবার বিকেলে গণিত বিভাগের দুইজন শিক্ষক এবং একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। কারা এবং কেন এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার অনুসন্ধানসহ লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে এবং এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের কক্ষে আটকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আবাসিক হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ইং শিক্ষা বর্ষের আল সামাদ শান্ত এবং বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ইং শিক্ষা বর্ষের তাহমিদ জামান নাভিদকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।