বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টেন্ডারে ‘অদ্ভুত’ শর্ত

বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমএসআর সরবরাহের প্রায় ৩ কোটি টাকার টেন্ডারে ‘অদ্ভুত’ শর্ত জুড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব নির্ধারিত ঠিকাদারকে একতরফা সুযোগ দিতে সিভিল সার্জন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট (পিপিআর-২০০৮) বর্হিভূত একাধিক শর্ত জুড়ে অন্যান্য আগ্রহী ঠিকাদারদের নিরুৎসাহিত করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য ১০০ শযা বিশিস্ট বরিশাল জেলা হাসপাতালে ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ-ব্যান্ডেজ, তুলা, লিলেন, কেমিক্যাল ও রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক কালবেলা’ নামে একটি জাতীয় দৈনিকে ৬ গ্রুপের দরপত্র (টেন্ডার) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন ডা. মো মনোয়ার হোসেন। যার মোট প্রাক্কলন প্রায় ৩ কোটি টাকা।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে পর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দরপত্র (সিডিউল) সংগ্রহ করে ‘অদ্ভুত’ শর্তাবলী দেখে ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দরপত্রে অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অত্র প্রতিষ্ঠানের (সিভিল সার্জন কার্যালয় বরিশাল) প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের আশ্রয় বা মামলা পরিচালনা করতে পারবেনা। এই মর্মে রাজী থাকলে দরপত্রে অংশগ্রহন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, তাদের দেয়া শর্তে দরদাতার নিজস্ব প্যাডে অঙ্গীকারনামা করে দরপত্রের সাথে দাখিল করতে বলা হয়।
এছাড়া দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ গ্রুপে মোট ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ব্যাংক স্থিতি থাকার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
এই দরপত্রে আগ্রহী ঠিকাদার আব্দুল হালিম বলেন, সিভিল সার্জনের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর। গত ১১ অক্টোবর তিনি সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ৬ গ্রুপের সিডিউল সংগ্রহ করেন। দরপত্রের শর্তাবলী দেখে তিনি বিস্মিত। কোন টেন্ডারে অংশগ্রহন করতে হলে দরপত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকের স্থিতি থাকলেই সেটি পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী গ্রহনযোগ্য। অথচ বরিশালের সিভিল সার্জন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে টেন্ডার জমা দেয়ার ৩ দিন আগে পর্যন্ত ব্যাংকের স্থিতি চেয়ে পিপিআর এর শর্ত লংঘন করেছেন।
আরেক ঠিকাদার শামসুদ্দোহা আজাদ বলেন, দরপত্রে অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে আশ্রয় গ্রহন কিংবা মামলা করতে পারবেন না এমন নিয়ম পিপিআর এ নেই। কোন নির্দিস্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ওই ৬ গ্রুপের কাজ পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সিভিল সার্জন দরপত্রে (সিডিউলে) পিপিআর বর্হিভূত শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর সংক্ষুব্ধ হলে তিনি বা তারা আদালতের আশ্রয় গ্রহন করতে পারবেন। কারোর আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার সিভিল সার্জন খর্ব করতে পারেন না।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. তারিকুল হক বলেন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে চাহিদামতো ব্যাংক স্থিতি থাকতে হবে এমন নিয়ম পিপিআর এ নেই। আগ্রহী ঠিকাদার বিজ্ঞপ্তি দেখে দরপত্র কিনবেন। দরপত্র হাতে পেয়ে যদি কেউ দেখেন যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে তার ব্যাংক স্থিতি চাওয়া হয়েছে তাহলে সে কি করে ব্যাংক স্থিতি দেখাবেন। এটা পিপিআর এর নীতিমালায় নেই।
সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধিন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক অমূল্য কুমার দেবনাথ বলেন, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে ঠিকাদারের ব্যাংক স্থিতি নিস্প্রয়োজন। কোন ব্যক্তি সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় গ্রহন কিংবা মামলা করতে পারবেন না এমন নিয়ম পিপিআর এ নেই।
সিপিটিইউ’র পাবলিক পলিসি এন্ড প্রকিউরমেন্ট পরামর্শক একেএম ফজলুল করিম বলেন, সরকারি কেনাকাটায় কঠিন কিংবা অতিরিক্ত কোন শর্ত জুড়ে দেয়া পিপিআর বর্হিভূত। কেউ আদালতে মামলা করতে পারবেন না এমন নিয়ম পিপিআর এর কোথাও উল্লেখ নেই।
দরপত্রে পিপিআর বর্হিভূত শর্তের বিষয়ে মুঠোফোনে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি পিপিআর বর্হিভূত কিছু করেননি। পিপিআর শর্ত না দেখে দরপত্র বিক্রি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুল তো হতেই পারে। ভুল হলে সংশোধন করবেন। কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য দরপত্রে অতিরিক্ত শর্ত দেয়া হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।