বাংলাদেশের জয়

লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরি আর সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়েকে ১৫৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
২৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২৮.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় ১২১ রানে। এর আগে হারারেতে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৪৮ রান, বুলাওয়ায়োতে ২০১৩ সালে। সেই ম্যাচে ১২১ রানে জিতেছিল টাইগাররা। এর আগে যা ছিল রানের দিক থেকে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
এই ম্যাচে একসঙ্গে দুটি রেকর্ড হাতছাড়া হলো মাশরাফি বিন মুর্তজার। তার মধ্যে এক রেকর্ড ভাঙায় যেন স্বস্তি পেলেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে কোনো রান জমা করতে পারেনি তারা। ব্লেসিং মুজারাবানির করা পরের ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। ৭ বল মোকাবিলা করেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরে বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৪ বার ডাক মারার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড গড়লেন টাইগার অধিনায়ক। ৩৩ ম্যাচে ডাক মেরে এতদিন মাশরাফি-তামিম একই চেয়ার ভাগাভাগি করছিলেন। সেই সঙ্গে হাবিবুল বাশার সুমনকে টপকে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ১৯ ডাক মারার রেকর্ডটিও নিজের করে নিলেন তামিম।
মাশরাফির আরেক রেকর্ড ভেঙেছেন সাকিব। ইনিংসে নিজের প্রথম উইকেট ব্রেন্ডন টেলরকে আউট করে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হলেন তিনি।
মাশরাফি ২২০ ম্যাচে ২২০ ইনিংসে নিয়েছেন ২৭০ উইকেট। তার একটি ২০০৭ সালে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে। আর বাংলাদেশের হয়ে ম্যাশের উইকেট ২৬৯টি। এই ম্যাচে ৯.৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়ে সাকিবের উইকেট সংখ্যা দাঁড়াল ২৭৪। ওয়ানডেতে তিনবার ৫ উইকেট পেলেন সাকিব। তার দুটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন তিনি।
ব্যাটিংয়ে দীর্ঘদিন নিজের ছায়া হয়ে আছেন সাকিব। দলের দুঃসময়েও ব্যক্তিগত ১৯ রানে মুজারাবানির দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ব্যর্থ হন মোহাম্মদ মিঠুন (১৯) ও মোসাদ্দেক হোসেনও (৫)।
বাংলাদেশ লড়াকু পুঁজি পায় লিটনের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরির সুবাদে। সতীর্থদের একের পর এক বিদায়ের সময় অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেন তিনি। ৪ উইকেট হারানোর পর মাহমুদউল্লাহকে (৩৩) নিয়ে ৯৩ এবং পরে আফিফ হোসেনের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহের ভিত শক্ত করেন ম্যাচ সেরা হওয়া লিটন। তার ১১৪ বলে ১০২ রানের দরকারি ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮ চারে।
এরপর শেষদিকে ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ৩৫ বলে ৪৫ রানের উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলেন আফিফ। মেহেদী হাসান মিরাজকে (২৬) নিয়ে ৪২ বলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। তাসকিন ব্যক্তিগত এক রানে ফেরেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। শরীফুল ইসলাম ১ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি।
জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন লুক জংওয়ে। ২টি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভা।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ওপেনার মারুমানিকে (০) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন সাইফউদ্দীন। চতুর্থ উইকেট হিসেবে টেলরকে (২৪) ফিরিয়ে উইকেট উৎসব শুরু করেন সাকিব। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫১ বলে সর্বোচ্চ ৫৫ রান নিয়েছেন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাবা। তাকেও ফেরান সাকিব। তার বাকি ৩ শিকার হলেন রায়ার্ন বার্ল (৬), মুজারাবানি (২) ও এনগারাবা (০)।
‘অ্যাবসেন্ট হার্ট’ হওয়ায় ব্যাটিংয়ে নামেননি টিমিসেন মারুমা। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেছেন সাইফউদ্দীন, তাসকিন ও শরীফুল।