বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের যুগে ই-সিকিউরিটির গুরুত্ব ও করণীয়

১৯৯৭-১৯৯৮ সালে আমরা যখন ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স নিয়ে লেখাপড়া করছিলাম, তখন প্রায়ই আলোচনা করতাম বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স এর ডাটা বেইস এডমিনিস্ট্রেশন, সিস্টেম এনালাইসিস এন্ড ডিজাইন এর ই-সিকিউরিটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ আমরা নৈতিকতার প্রশ্নে খুবই দুর্বল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্মে ই-সিকিউরিটি অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। ইলেকট্রনিক রেকর্ডস, ক্রিপ্টোগ্রাফি, অথেন্টিকেটিং ইলেকট্রনিক রেকর্ডস, পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার, সার্টিফিকেশন অথরিটির কোথাও সামন্য ভুল, ইনফরমেশন সিস্টেমের সিকিউরিটিকে ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যেতে পারে। আমরা আমাদের থিসিস পেপারে উল্লেখ করতাম ডাটা বেইস এডমিনিস্ট্রেশন, সিস্টেম এনালাইসিস এন্ড ডিজাইন এর নিশ্চিদ্র ই-সিকিউরিটি কখনো সম্ভবপর নয়। আজ আমরা দেখছি পৃথিবীর অনেক সুরক্ষিত সিকিউর ডাটা বেইস ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। সে পেক্ষাপটে আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশনের যুগে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্ম যতই এগিয়ে যাবে ততই ই-সিকিউরিটি বিষয়টি যদি গুরুত্ব সহকারে ও সর্তকতার সঙ্গে বিবেচনা না করা হয়, তাহলে নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান হয়তো ডাটা বা রেকর্ড ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্মে দিয়ে নিরাপদ ভাববে, কিন্তু ই-সিকিউরিটি যদি নিñিদ্র না হয়, ওই ডাটা যদি মন্দলোকের কুক্ষিগত হয় তাহলে তা রাষ্ট্র, নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভয়ানক বির্পযয় ডেকে আনবে।
তবে আশার বিষয় বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনেক এগিয়েছে। করোনা মহামারী ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স
মতো বেশ কিছু মেগা-প্রবণতা এবং রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করেছে। করোনা মহামারী আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, ভবিষতে যেকোন সংকট মোকাবেলার জন্য এখনই আমাদের ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স এর জন্য সরকারের নীতির সময় উপযোগী স্বল্পমেয়াদে, মধ্যমেয়াদে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা প্রয়োজন। এটি অনস্বীকার্য যে করোনা মহামারীর সময়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে
ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য-আদান-প্রদান, ই-অংশগ্রহণ এবং দ্বিমুখী যোগাযোগ স্বল্প মেয়াদে সংকটের জন্য একটি কার্যকর উপায়। আমরা অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করেছি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো সরকারি পরিষেবাগুলি খুবই দ্রুততার মধ্যে ডিজিটাল মোডে স্থানান্তরিত হয়েছিলো। এটি আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, দূরবর্তী কাজ এবং সামাজিক দূরত্বকে শক্তিশালী করতে এবং সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রশমিত করতে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্ম ব্যবহার একটি কার্যকরি উপায়। করোনা মহামারীর সময় জনপ্রশাসনের ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফম ব্যবহারের ফলে শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় জনসেবা প্রদানকে ত্বরান্বিত করেছিলো। রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স প্লাটফর্ম ব্যবহারের এই অভিজ্ঞতার আলোকে ডিজিটাল পরিষেবাগুলিকে আপগ্রেড এবং সরকার ও বেসরকারি খাতের অন্যান্য স্তরের সাথে ডিজিটাল অংশীদারিত্ব বাড়াতে পারলে ও সঠিক পরিকলাপনা গ্রহণ করতে পারলে, ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে তা এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে প্রত্যন্ত এবং গ্রামীণ অঞ্চলে, পর্যাপ্ত আইটি অবকাঠামোর অভাব থাকলে ডিজিটালাইজেশন চ্যালেঞ্জিং হবে।
বর্তমানে সরকার ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের উৎসাহ প্রদান করছে। করোনা মহমারীর সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি। আর ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নারীদের উল্লেখযোগ্য হারে অংশগ্রহণ। আমরা জানি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে রূপ দিতে সরকার যুগান্তকারী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে । বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। সবক’টি উপজেলাকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে । বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ প্রায়। দেশে চালু হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করা হচ্ছে।
পরিশেষে এটি বলা চলে গোপনীয়তা এবং ডেটা সুরক্ষা সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি কমানোর জন্য, তথ্য পর্যবেক্ষণ এবং উন্নত ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার অপরিহার্য । বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশ সরকার ই-গভর্নমেন্ট, ই-গভর্ন্যান্স, ই-ডিলিবারেশন, ই-অংশগ্রহণ এবং ই-ভোটিং গ্রহণ করার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে, আমার মতে করোনা মহামারীর অভিজ্ঞতা এটিকে আরো ত্বরান্বিত করবে এবং এখনই আমাদের ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স এর ডাটা বেইস এডমিনিস্ট্রেশন, সিস্টেম এনালাইসিস এন্ড ডিজাইন এর ই-সিকিউরিটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে। আর গণমাধ্যমগুলোকে এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। অতিরিক্ত নেতিবাচক সংবাদ এই নতুন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের বিষয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে।
লেখক: অভিজিৎ বড়ুয়া অভি, কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক