বানারীপাড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে সরকারি জমিতে বোনের জন্য ঘর তুলে দেওয়ার অভিযোগ

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্যোগসহনীয় ঘর নিজের বোনের নামে বরাদ্দ দেওয়া এবং তা সরকারি খাস মজিতে নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও অর্থের বিনিময় টিউবওয়েল দেওয়াসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ আছে।
বানারীপাড়া উপজেলার ৩ নম্বর সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মান্নানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে স্থানীয় সকার বিভাগ। তবে এখনও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান আ. মান্নানের বিরুদ্ধে ১৭টি পুরাতন ব্রিজের পোস্ট, বীম এঙ্গেল রডসহ বিভিন্ন মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছেন ইউনিয়নের আউয়ার এলাকার বাসিন্দা এইচএম হাফিজুর রহমান মামুন। এছাড়ার তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্যক্তি অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। তবে লিখিত অভিযোগ করার পর নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো. জামাল উদ্দিন অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ত্রাণ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া দুর্যোগসহনীয় ঘর নিজের বোনের নামে বরাদ্দ দেওয়া অভিযোগ আছে। একই সঙ্গে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে নির্মাণ করার কথা। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান আ. মান্নান বোনকে দেওয়া ওই ঘর সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়া হলে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বানারীপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত শারমিন তদন্ত করে গত ২৮ মার্চ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় হতে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বোনের নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যতদূর জানা যায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে যে সকল ব্যক্তির নামে দুর্যোগসহনীয় ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির উপর নির্মাণের জন্য। আবদুল মান্নান মৃধা অবৈধভাবে সরকারি খাস জমিতে বোনের নামে ঘর বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।’
এমন প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ৩১ মার্চ বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা স্বাক্ষতির চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বোনের নামে বরাদ্দকৃত ঘরটি সরকারি খাস জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। যা বিধিবিধান বহির্ভূত বলে নি¤œস্বাক্ষরকারীর নিটক প্রতীয়মান হয়।’ এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগ বরিশালকে অনুরোধ জানান।
ওই চিঠি পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার বিভাগ বরিশালের সহকারী পরিচালক শরীফ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন গত ১২ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এব্যাপারে চেয়ারম্যান আ. মান্নানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থানীয় সকরার বিভাগ বরিশাল কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
এব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা ভোরের আলোকে বলেন, সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মান্নানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আমি তদন্ত করিনি। তদন্ত করেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি। তাঁর ওই দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে একমত হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ বরিশাল কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে স্থানীয় সরকারি বিভাগ আমাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।