মঠবাড়িয়ায় সিত্রাংয়ের তান্ডবে ক্ষতির মুখে কৃষক

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় সোমবার টানা দিনভর ভারি বর্ষণ আর ধমকা হাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং কিছুটা তান্ডব চালালেও ঘটেনি প্রাণহানীর মত বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার মৌসুমি সবজি চাষিরা।
এছাড়া দুই এক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা ভেঁঙে পড়া, নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হওয়া, দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন থাকা, মৎস্য চাষিদের মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে খাল-বিলে মাছ ভেঁসে যাওয়া, মৌসুমী সবজি চাষীদের খেত বিনষ্ট হওয়া সহ বেশ কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে উপজেলার কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, মৎস্যজীবী ও খেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষরা।
উপজেলার সাপলেজা, বড়মাছুয়া, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দুই দিনের টানা বিরামহীন বৃষ্টি ও ধমকা বাতাসে আমন ধান আসা সম্ভাবনাময় গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া ধান গাছগুলোর নিচেই বৃষ্টির পানি জমে আছে। লোকালয়েও কিছু কিছু জায়গা প্লাবিত রয়েছে।
তুষখালী, বেতমোড়, গুলিশাখালী ছোট-মাছুয়া এলাকায় মৌসুমি চাষিদের কলাবাগান পানিতে প্লাবিত না হলেও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান রয়েছে। কলাগাছগুলো ভেঁঙে নুয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পেঁপে চাষিদের অবস্থা আরও করুন। কোন গাছেই পেঁপে নেই। অধিকাংশ গাছ ভেঁঙে নুয়ে পড়ে আছে বাগানে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত যে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোতেও ধরেছে পঁচন।
এদিকে মিরুখালী ইউনিয়নের সাচকীবাড়ি সহ আশপাশের কয়েকটি পানের বরজ পানিতে প্লাবিত অবস্থায় দেখা যায়। নি¤œ অঞ্চল আর বৃষ্টির পানি দ্রুত সময় চলে না যাওয়াতে অধিকাংশ পানের বীজে পঁচন ধরেছে।
পৌর শহরের পশ্চিম কলেজ পাড়া এলাকায় সোমবার রাতের সিত্রাংয়ের ভারি ধমকা হাওয়ায় একটি বসতঘরে গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ওই বসতঘরের টিন দুমড়ে মুচড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। তবে প্রাণহানির মত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। পরিবারের লোকজন আগ থেকেই ঘূর্ণিঝড় সর্তকতা অবলম্বন ও পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে পাশের ব্লিডিংয়ে অবস্থান নেওয়ায় বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। একই এলাকায় একটি দ্বিতল ভবেনর উপর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুরো উপজেলা জুরে টানা ২দিন বিদ্যুৎ না থাকায় সরকারি হাসপাতাল সহ প্রায় ২০টি প্রাইভেট ক্লিনিকে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবাটুকু দিতে বেগ পোহাতে হয়।
এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে বাড়ি ফেরা দিনমজুর পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিত্রাংয়ের তান্ডব থেকে সংঙ্কামুক্ত হলেও গত দুইদিন ধরে কর্মহীন থাকায় সামনের কয়েকটা দিন পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবে সেই চিন্তা আর সংঙ্কায় এখন ভোগাচ্ছে তাদের। বাড়ি ফিরে এসে আবার নতুন করে বৃষ্টির পানিতে বিনষ্ট হওয়া রান্নার ঘর ও আঙ্গিনা ঠিক করা কাজে অনেককে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এখনও রান্না ঘরের চুলায় আগুন ধরাতে পারেনি প্লাবিত এলাকার লোকজন। শুকন খাবার দিয়েই কোনমতে দিনপার করছে।
খেতাছিড়া ও বড়মাছুয়ার জেলে পল্লীর কয়েকজন জেলেদের সাথে কথাবলে জানা গেছে, মাছ ধরার অবরোধ সাথে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারনে তারা এখন সম্পূর্ন কর্মহীন। সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাছিড়া গ্রামের জেলে জসিম জানান, মাছ ধরার অবরোধ থাকলেও এতোদিন মাছ না ধরে অন্য কাজকর্ম করে খেতাম। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারনে গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার ৩দিন কর্মহীন থাকায় হতাশা আর দুরচিন্তায় চেপে ধরেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ভারি বর্ষন আর ধমকা হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মৌসুমি চাষিরা। উপজেলায় মৌসুমী সবজি চাষাবাদের মোট জমি রয়েছে ৪৫ হেক্টর। যার আংশিক ও সম্পূর্ণ মিলে ৪৫ হেক্টরে জমির আবাদ ফলনই ক্ষতিগ্রস্থর মুখে। উপজেলায় চলতি বছরে ২০২০৯ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে দুর্যোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৫২০ হেক্টর এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমির আবাদ। তবে এ কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- আমন ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়লেও তেমন কোনো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। পানি সরে গেলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা মৎস্য কমকতা মো. হাফিজুর রহমান জানান, উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ৩০ হেক্টর আয়াতন বিশিষ্ট মৎস্য খামার,জলাশয়, পুকুর আছে। মাছ চাষের এসব খামার, জলাশয় ও পুকুর থেকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পানিতে প্লাবিত হয়ে ২০০ মেট্রিক টন মাছ ভেঁসে গেছে। যা আনুমানিক ক্ষতির পরিমান টাকার মূল্যে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার। এছাড়া খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমান প্রায় ২ লক্ষ টাকা।