বিবি তুমি বাঁচবে না। শুধু একা কি করে বাঁচবে? কোন চিকিৎসা নেইতো তেমার। কোন ডাক্তার নেই এই সমাজ শহরে যে তোমাকে বাঁচাতে চায়, বাাঁচাতে পারে। প্রতি উৎসব পার্বনে, শোকে, সফলতায় সর্ব প্রথমেই নির্ধারিত হয়ে যায় তোমার মৃত্যু। না, কোন মানব বন্ধন নেই, পেশাদার মানববন্ধনকারীদের। কারণ তারা জানে তুমি সম্পদশালী কিন্তু তোমার হাতে কোন নগদ নারায়ন নাই। তাই তোমায় রক্ষায় কোন মানববন্ধন নাই। তোমাকে বাঁচাতে কোন প্রশাসন নাই, করপোরেশন নাই, কোন নেতা এবং রাজনীতি নাই।
বিবি তুমি বাঁচবে না। তোমার মৃত্যুর আগাম ভবিষ্যৎ বাণীর জন্য কোন জ্যোতিষ শাস্ত্রের জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন নাই। বিবি তোমার নিত্য অকাল প্রায়াণে দ্বিতীয় বিবির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কোন বিকল্প সুযোগ নাই। তা হলে কি করতে পারি, কি করার আছে আমাদের? তোমার একখানা সুরম্য দেয়াল থাকলে পরে স্বার্থের প্রয়োজনে দুর্গন্ধ এড়ানোর প্রয়োজনে কেউ নিশ্চয়ই লিখে দিত এখানে কেউ... করিবেন না । বিবি তোমার একখান রাজকীয় গেট থাকলে পরে ঝুলানো যেত কুকুর হইতে সাবধান। না বিবি তেমন তোমার কিছুই নাই। তোমার কোন অভিবাবক নাই। যে তোমাকে বাঁচাতে তোমার পাশে দাঁড়াবে।
বিবি তোমাকে সাজাতে চেয়েছিলো তদানিন্তন মেয়র মুজিবর রহমান সারওয়ার। তোমাকে যথার্থই সুন্দরী করেছিলো মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। স্বল্প সময়েও তোমার পাশে দাঁড়িয়েছিলো আওলাদ হোসেন দিলু। তারপর যিনি দায়িত্ব নিলেন আহসান হাবিব কামাল। যিনি ছিলেন মেয়র হিসেবে। তাঁর সৌন্দর্য জ্ঞানের ধারণা, তা যে কোন জ্ঞানীকে অজ্ঞান করে দেবে।
আমরা দেখেছি প্রতি মুহূর্তে আমাদের বিবি বৃত্তাবদ্ধ উচ্চাভিলাসী সব অযোগ্য মানুষদের রঙিন প্রচারে। ওরা কেউ সুন্দর বোঝে না অথচ সুন্দরের বাণী লেখে। ওরাতো কেউ পরিচ্ছন্নতা, মুক্ত বাতাস, দৃষ্টিনান্দনিকতা বোঝে না। সুন্দর হত্যার এমন সার্বজনীন মিছিল বোধ করি আর কোন মনেুষদের পক্ষে সম্ভব নয়। কি অসাধারণ আমাদের বোধ, বুদ্ধি, বিবেচনা। না তুমি বাঁচবে না বিবি। তুমি বাঁচবে না। অতএব এই মুহূর্তে তুমি একা। কেউ নেই তোমাকে বাঁচাতে সামনে পা বাড়াবে। তোমার সুন্দরের প্রয়োজন কী তবে শেষ? বয়স হয়েছে তাই না? আর কতো? সবাইকে উর্ধ্বকাশে তুলে তুমিই কেবল ছবি হয়ে হারিয়ে যাবে সুস্থ্য মানুষদের দৃষ্টির আড়ালে। কেন মানুষ তোমাকে খুঁজবে? আজ যারা তোমায় ঢেকে রেখেছে তাদের মধ্যেই কেউ একজন কোন এক অনাগত জাদুঘরের ফলক উন্মোচন করবে।
একদিন যারা বুঝতো তারা সবাই আজও তোমার কদর করে। এখনো যারা বাইরে থেকে আসে তারা একবার তোমায় দেখতে আসে। মেয়র কামালের হাত ধরে তোমায় ঢেকে দেওয়া রঙিন চাদর সরিয়ে তোমার ছবি তুলেছে, তোমার সেই সৌন্দর্যও জানান দেয় পৃথিবীকে। এখন্ োভরা বর্ষায় টৈটুম্বুর তোমার অবয়ব। সে যারা দেখেনি তারা সবাই তোমার অপূর্ণ সুন্দর্য দেখার অধিকারী।
কিন্তু বিবি তীব্র গরমে তোমার অপরূপ সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। পানি পচাঁ গন্ধ, মাছ মরা গন্ধ চারদিকের বাতাস ভারী করে তুলেছে। দুর্গন্ধে বিবির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আর এই অবস্থার জন্য দায়ি একজন কাউন্সিলর! এটা মানা যায়?
হয়তো একদিন মাইক্রোফোনে দাঁড়িয়ে কেউ বলবে, একজন ধর্ম যাযক উলিয়াম জন কেরির পালিত নাতনী জ্যানেট বিবি ওরফে জান্নাত বিবির যার নামে এই পুকুর (বিবির পুকুর), যদি আমরা এই বিবির পুকুর রক্ষা করতে পারতাম তবে নিশ্চয়ই আমাদের সুনাম, যোগ্যতা ছড়িয়ে পরতো চারিদিকে। কিন্তু তা হচ্ছে না। কতিপয় অসুন্দর মানুষদের কুৎসিত মানসিকতার জাতাকলে পিষ্ট হতে হতে বিবির পুকুর আজ মৃত প্রায়। সে এখন দৃষ্টির আড়ালে এক আবদ্ধ সুন্দরের নাম। এর জন্য যারা দায়ী তাদের সবার শান্তির দাবি করছি। আমরা বিবির পুকুর রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি। তবে বরিশালের জাদুঘর নিশ্চয়ই বিবির ছবি যথার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকবে।
আমাদের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আশ^াস দিয়েছেন, বিবির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেবেন। তাঁর কাছে আহ্বান তিনি যেন সেই উদ্যোগ দ্রুত নেন। তা না হলে বিবি বাঁচবে না।