বেশিরভাগ দল ইভিএমে বিশ্বাস করে না

বেশিরভাগ দল ইভিএমে বিশ্বাস করে না

গত কয়েকদিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা  আওয়ামী লীগকে অবহিত করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংলাপের শেষ দিনে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংলাপে তিনি বিষয়গুলো তুলে ধরেন। ক্ষমতাসীন থাকার সুযোগে সিইসি আওয়ামী লীগকে অবহিত করার সুযোগ নিয়েছেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন। সংলাপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না বলে আওয়ামী  লীগকে এ সময় সিইসি জানান।

রবিবার (৩১ জুলাই) শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন ভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু,  সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী,  কাজী জাফরউল্লাহ,  ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান,  উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য  মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক  ড. সেলিম মাহমুদ,  দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার সংলাপে অংশ নেন।

সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসি বলেন, ‘আজকে এটা শেষ সংলাপ। এই সংলাপের একটি দ্বিমাত্রিকতা আছে। আমরা একইসঙ্গে সরকারের সঙ্গেও সংলাপ করছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করছি। এ দিক থেকে আমরা সৌভাগ্যবান যে, সরকারকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি। পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে সংলাপ করে এসেছি, সেখানে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। যেহেতু আপনারা সরকারে আছেন, কাজেই সেটা আপনাদের দৃষ্টিতে আনা উচিত।’

সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘অনেক পার্টি মনে করছে, একদিনে নির্বাচন করা সমীচীন হবে না। এটা ভারতের মতো একাধিক দিনে হাওয়া দরকার। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপ্রচুলতা আছে।’

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইভিএম। এভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশকিছু সমর্থন পেয়েছি। আবার বেশিরভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে— আমাদের ইভিএম নিয়ে যে অনুভূতি। আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি, এটাকে ডিসকারেজ করছি না। আমরা এ পর্যন্ত যে ইভিএম ব্যবহার করেছি, তাতে ভোটার ৭১ শতাংশ পর্যন্ত টার্নআউট হয়েছে। কিন্তু অনেককে আমরা আস্থায় আনতে পারছি না। কথাও বলেছি, কিন্তু তারা বলেছে ‘না’ এখানে একটা..। আপনাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইবো যে, ইভিএম নিয়ে একটা সংকট থাকবে। এটার বিষয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরাই নেবো সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি, এর ওপরে পুরোপুরি ঐকমত্য নেই।’’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে বলেছেন। সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের দেশের জনমানুষের অনেক বেশি আস্থা বলে তারা মনে করেন। এটা আপনাদের নলেজে আনার জন্য যে, আমরা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত কিন্তু নেইনি। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা পরে জানাবো। সবগুলো সংলাপ পর্যালোচনা করে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত জানাবো।’

সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে কমিশনকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি। ১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একঅর্থে সাম্প্রতিক। রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৯১ সাল থেকে সম্ভবত নির্বাচন হচ্ছে। অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। নিরপক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।’

প্রধান নির্বাচনার বলেন, ‘আমরা প্রায় চার-পাঁচ পর্বে সুধীজনদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিলাম। সুধীজন তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনে অর্থশক্তি, পেশি শক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্স ভরাট করা, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান, আমলতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইন-শৃঙ্খলা সদস্যদের ভূমিকা, নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা, সরকারের পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে মতামত ওঠে এসেছে। আমরা মতামতক পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে অবহিত করেছি।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা  করে যাবো। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আওয়ামী লীগ সম্ভবত দেশের প্রাচীনতম এবং সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত একটি রাজনৈতিক দল। বড় দলের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকে। পরপর তিন বার সরকারে অধিষ্ঠিত। এজন্য সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে কোনও কথা নেই। আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি, আওয়ামী লীগ আর ১০টি দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বিমাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।’